
মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আক্রমণ; উগ্রবাদীদের তোষণ নাকি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ?
সাদ্দাম হোসেন, প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক:
বাংলার যেসব ঐতিহ্য বিশ্বমঞ্চে মর্যাদার আসন লাভ করেছে, সেগুলোর প্রতি ধারাবাহিক আক্রমণ আজ আর বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। ইউনূস গংদের ‘পাকিস্তান ২.০ প্রকল্প’-এর বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই আজ রাষ্ট্রীয় মদদে টার্গেট করা হচ্ছে বাঙালির গৌরবময় সাংস্কৃতিক নিদর্শনগুলোকে। তারই এক জ্বলন্ত উদাহরণ মঙ্গল শোভাযাত্রা—যা শুধু বাংলা নববর্ষের অংশ নয়, বরং জাতি-ধর্ম-বর্ণ-পেশা নির্বিশেষে সকল মানুষের মুক্তি-সমতা-সৌহার্দ্য ও উৎসবমুখর মিলনস্থল।
২০১৬ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ বা ‘অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃত এই শোভাযাত্রার উপর এখন বর্বর রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ চলছে। নাম বদলের চক্রান্ত, চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিল্পীদের অংশগ্রহণে বাধা, নারীদের অবাধ উপস্থিতি রুদ্ধ করা এবং সর্বসাধারণের আয়োজনকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে নিছক এক ‘সরকারি প্রকল্পে’ পরিণত করার অপচেষ্টা আজ মঙ্গল শোভাযাত্রাকে প্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে।
এই চিত্র যেন আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় ৬০-এর দশকে, সামরিক শাসক আইয়ুব খানের ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ নামক প্রহসনের দিনগুলোতে—যেখানে সংস্কৃতি ছিল শাসকের চোখে শত্রু। আজ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটছে; চরিত্রের পরিবর্তন ঘটলেও উদ্দেশ্য একই—বাঙালির হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক, মানবিক, মুক্তচিন্তার চেতনাকে ধ্বংস করা।
বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেসব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিয়েছে—জামদানি, শীতলপাটি, বাউল গান, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও ঢাকার রিকশা আর রিকশা পেইন্টিং—তার প্রতিটিই এখন উগ্রবাদীদের লক্ষ্যে পরিণত। এদেশের নারী-পুরুষ, তরুণ-প্রবীণ, হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সবাই মিলে যে প্রাণের উৎসবে মেতে ওঠে, সেই উৎসবের মূলে আঘাত হানার অর্থই হলো—বাংলাদেশের অস্তিত্বে আঘাত।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার ঐতিহাসিক ভূমিকা থেকে একচুলও সরে যাবে না। দেশের ছাত্র-যুব-নারী-পেশাজীবী-কৃষক-শ্রমজীবী মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব, ঐতিহ্য রক্ষার সংগ্রাম চালিয়ে যাব। মঙ্গল শোভাযাত্রা যেমন প্রতীক হয়ে উঠেছে আমাদের সংস্কৃতি, সৌন্দর্য ও অসাম্প্রদায়িকতার—তেমনি তা হবে প্রতিরোধের প্রতীকও।
বাংলা নববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার হোক—উগ্রবাদ, ধর্মব্যবসা ও সংস্কৃতির উপর আঘাতের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ।
শুভ নববর্ষ ১৪৩২।
“এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ
তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক।”
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
--------সাদ্দাম হোসেন
সভাপতি ,
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাকা । বাংলাদেশ