
নির্বাচনে নিষিদ্ধ তানজানিয়ার প্রধান বিরোধী দল
Progga News Desk:
তানজানিয়ার প্রধান বিরোধী দল চাদেমাকে এই বছরের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দলটির নেতা টুন্ডু লিসুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনার কয়েকদিন পর, এবার দলটিকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হলো।
তানজানিয়ার স্বাধীন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালক রামাধনি কাইলিমা বলেছেন, চাদেমা শনিবার (১২ এপ্রিল) নির্ধারিত তারিখে নির্বাচনী আচরণবিধির নথিতে স্বাক্ষর করেনি, যার অর্থ দলটিকে অক্টোবরের নির্বাচন থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে, দক্ষিণ তানজানিয়ায় একটি সমাবেশে নির্বাচনী সংস্কারের আহ্বান জানানোর পর চাদেমার নেতা টুন্ডু লিসুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আনা হয়েছে।
১৯৭৭ সাল থেকে তানজানিয়ার শাসন ক্ষমতায় রয়েছে সিসিএম। সর্বশেষ এসব ঘটনার পরে দলটি ক্ষমতা ধরে রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
শনিবার (১২ এপ্রিল), জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালক রামাধনি কাইলিমা বলেন, যেকোনো দল নির্বাচনী আচরণবিধিতে স্বাক্ষর করেনি, তারা সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। চাদেমাকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কোনো উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকেও নিষিদ্ধ করা হবে।
শনিবারের আগেই এক বিবৃতিতে প্রধান বিরোধী দল চাদেমা জানিয়েছিল, ভোট সংস্কারের দাবিতে তাদের কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলটি আচরণবিধি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে না।
দেশটিতে আগামী অক্টোবর মাসে সংসদীয় এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা রয়েছে। বিরোধী নেতা টুন্ডু লিসু বর্তমান প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসানকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ফেলবেন বলে মনে করা হচ্ছিল।
পূর্বসূরী জন মাগুফুলির মৃত্যুর পর, ২০২১ সালে সামিয়া সুলুহু হাসান যখন প্রথম তানজানিয়ার ক্ষমতায় আসেন, তখন তিনি বিরোধী দল ও গণমাধ্যমের ওপর পূর্বসূরি জন মাগুফুলি যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন, তা শিথিল করার জন্য প্রশংসিত হয়েছিলেন।
তবে সাধারণ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটি ক্রমবর্ধমানভাবে তার বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অক্টোবরের সাধারণ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান তার পূর্বসূরীর দমনমূলক কৌশলে ফিরে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে লিসুর চাদেমা দল।
আফ্রিকার দীর্ঘতম শাসনকারী দলগুলোর মধ্যে একটি সিসিএম (চামা চা মাপিন্দুজি), দলটি পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে তানজানিয়া শাসন করছে।
গত সপ্তাহে বিরোধী নেতা টুন্ডু লিসু ‘কোনো সংস্কার নেই, কোনো নির্বাচন নেই’ স্লোগানের অধীনে যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন, তানজানিয়ায় নির্বাচন পরিচালনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন না করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই।
লিসু দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের গঠন পরিবর্তন করা দরকার এবং প্রেসিডেন্ট কর্তৃক সরাসরি নিযুক্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত নয়।
তানজানিয়ার হাসান সরকার লিসুর বিরুদ্ধে নির্বাচন ব্যাহত করার এবং বিদ্রোহ প্ররোচনার অভিযোগ এনেছে।
বিরোধী দলীয় নেতাকে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) অর্থনৈতিক রাজধানী দার এস সালামের একটি আদালতে তোলা হয় এবং তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ। আদালত তাকে জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে এবং তার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
লিসুর আইনজীবী রুগেমেলেজা এনশালা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, অভিযোগগুলো রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
তিনি আরো বলেন, আপনি এই অভিযোগগুলোকে রাজনীতি থেকে আলাদা করতে পারবেন না।
তানজানিয়ার প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা অসংখ্যবার গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হয়েছেন। ২০১৭ সালে একটি হত্যা প্রচেষ্টা থেকে তিনি প্রাণে বেঁচে যান, তার গাড়িতে ১৬ বার গুলি চালানো হয়েছিল।
এরপর তিনি নির্বাসনে যান, ২০২০ সালে সেই বছরের নির্বাচনে মাগুফুলির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য কিছুদিনের জন্য ফিরে আসেন। ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর তিনি অনিয়মের অভিযোগ তুলে চলে যান।
এরপর তিনি ২০২৩ সালে আবার ফিরে আসেন, সেসময় ক্ষমতাসীন হাসান সরকার বিরোধীদের স্বাধীনতা প্রদানের লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে ‘অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে’ বিরোধী নেতা টুন্ডু লিসুকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তানজানিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।