Logo

আন্তর্জাতিক    >>   সম্মানসূচক নাগরিকত্বে কী সুবিধা রয়েছে, কতজন পেলেন বাংলাদেশের নাগরিকত্বে?

সম্মানসূচক নাগরিকত্বে কী সুবিধা রয়েছে, কতজন পেলেন বাংলাদেশের নাগরিকত্বে?

সম্মানসূচক নাগরিকত্বে কী সুবিধা রয়েছে, কতজন পেলেন বাংলাদেশের নাগরিকত্বে?

Progga News Desk:

আমাকে যদি কখনো আমেরিকা বের করে দেয়, আশ্রয় নেওয়ার মতো আমার একটা দেশ আছে, বাংলাদেশ। ১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফরে এসে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পাওয়ার পর এভাবে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলী। ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে যুদ্ধপীড়িত মানুষের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তাঁর সঙ্গে মার্কিন সরকারের বিরোধ তখন চরমে।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবদানের স্বীকৃতি দিতে বিদেশি বন্ধুদের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করে আসছে। গতকাল বুধবার কোরিয়ার বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের শিল্প খাতের বিকাশ, বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক আয়ে অবদানে স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে এই সম্মানসূচক নাগরিকত্ব (অনারারি সিটিজেনশিপ) দেওয়া হয়।

চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী দিনে কিহাক সাংয়ের হাতে এই স্বীকৃতি তুলে দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

 

সম্মানসূচক নাগরিকত্বে কী কী সুবিধা?

সরকারের নির্দেশনা অনুসারে বিদেশি নাগরিকদের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগ।

এই অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব শামীম খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার অভিপ্রায়ে। এর মধ্য দিয়ে মূলত একজন বিদেশির অবদানকে সরকার স্বীকৃতি দিল। একজন বাংলাদেশি নাগরিক যে আইনি ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করেন, সেটা সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পাওয়া ব্যক্তিরা পাবেন না।

উদাহরণ দিয়ে শামীম খান বলেন, এমন নাগরিকত্ব পাওয়া ব্যক্তিরা ভোট দেওয়া বা ভোটে প্রার্থী হতে পারবেন না। তাঁরা ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা সুবিধা পাবেন। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত কতজনকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়েছে, তার সঠিক সংখ্যা তিনি বলতে পারেননি।

 

কিহাক সাংকে নাগরিকত্ব দেওয়ার নেপথ্য কী?

কিহাক সাং তাঁর ৭৮ বছরের জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় ধরে জড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের সঙ্গে। আশির দশকে এ দেশের পোশাকশিল্পের যাত্রার শুরুতে তিনি ছিলেন এই শিল্পের যাত্রাসঙ্গী। শুধু তা–ই নয়, আশির দশকে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম বিদেশি বিনিয়োগকারী। তাঁর এই দীর্ঘ যাত্রা এখন এক শিল্পসাম্রাজ্যে রূপ নিয়েছে।

তাঁকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি ফেসবুকে তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের উপ–প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। তিনি লিখেছেন, চীনের হাইনানে কয়েক সপ্তাহ আগে কিহাক সাংকে সম্মানসচূক নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানে বিওএও সম্মেলনের এক ফাঁকে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশকে নিজের হৃদয়ের সঙ্গে জড়িয়ে রাখা কিহাক সাংকে সম্মাননা জানানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি না। তখনই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ডেকে কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।

কে এবং কেন সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পেলেন?

এ পর্যন্ত কতজন বিদেশিকে বাংলাদেশ এ ধরনের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়েছে, তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। তবে পাঁচজনকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

 

মোহাম্মদ আলী

১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ দিনের জন্য বাংলাদেশ সফর করেন মোহাম্মদ আলী। বাংলাদেশ সার্কেল নামের একটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ ফিল্মমেকার রেগিনাল্ড মাসাই ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিনের উদ্যোগে মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশ সফর করেন। বক্সিংয়ে অসাধারণ অবদানকে সম্মান জানাতেই তাঁকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করে বাংলাদেশ। দেওয়া হয় বাংলাদেশি পাসপোর্টও।

 

অমর্ত্য সেন

১৯৩৩ সালে বাংলাদেশের মানিকগঞ্জে জন্ম অমর্ত্য সেনের। ১৯৪৫ সালে দেশত্যাগের আগে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু। ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়ার পর ঢাকার বলধা গার্ডেনে তাঁর সম্মানে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে তাঁর হাতে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব তুলে দেওয়া হয়। অর্থনীতিতে তাঁর অর্জনকে সম্মান জানাতে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়।

ডা. এড্রিক বেকার

এড্রিক বেকারের জন্ম ১৯৪১ সালে নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটনে। ১৯৬৫ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করে নিউজিল্যান্ড সরকারের সার্জিক্যাল টিমে যোগ দিয়ে চলে যান যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনামে। সেখানে কাজ করেন ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। মাঝখানে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে স্নাতকোত্তর কোর্স করেন ট্রপিক্যাল মেডিসিন, স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা এবং শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ে। ১৯৭৯ সালে চলে আসেন বাংলাদেশে।

বাংলাদেশে এসে এড্রিক বেকার মেহেরপুর মিশন হাসপাতালে প্রায় দুই বছর এবং পরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী হাসপাতালে কাজ করেন। এরপর যোগ দেন মধুপুর গড় এলাকার থানারবাইদ গ্রামের চার্চ অব বাংলাদেশের একটি ক্লিনিকে। স্বাস্থ্য খাতে তাঁর নিঃস্বার্থ ও নিরলস সেবার স্বীকৃতি হিসেবে সরকার তাঁকে ২০১১ সালে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করে।

ফাদার মারিনো রিগন

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় ইতালির নাগরিক ফাদার মারিনো রিগনকে ২০০৯ সালে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করে বাংলাদেশ সরকার। ১৯৫৩ সালে মিশনারি কাজের অংশ হিসেবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আসেন তিনি। এরপর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে নিজেকে নিয়োজিত করেন।

 

গর্ডন গ্রিনিজ

১৯৯৬ সালে গর্ডন গ্রিনিজ আসেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ হয়ে। এ দেশে থাকলেন তিন বছর। ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফিতে আকরাম, আতহার, মিনহাজুল, আমিনুল, রফিক, হাসিবুল, খালেদ মাসুদ, খালেদ মাহমুদদের নিয়ে এনে দিলেন অবিস্মরণীয় এক সাফল্য। এ দেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল। তারই স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৭ সালে গ্রিনিজের হাতে তুলে দেওয়া হয় বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও সম্মানসূচক নাগরিকত্ব।