
আমাদের নেতা-কর্মী, ছেলেদের গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করলে, সেই হাত আমরা কেটে নেব: ছাত্রদলের আহ্বায়ক সানাউল্লাহ
Progga News Desk:
যদি আমাদের আর একটা নেতা-কর্মী, ছেলের গায়ে, বিএনপির নামধারী আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে সেই হাত আমরা কেটে নেব।
আপনারা যদি মনে করেন বিন্নাগনিকে মাইনাস করে, বিন্নাগনির ছেলেপেলেদের ওপর আক্রমণ করে আপনারা আপনাদের গায়ের গোশত ঝাড়বেন, আমরা আপনাদের গোশত ছিনে নিয়ে আসব।
নোয়াখালীর সেনবাগ থানার মোড়ে আয়োজিত এক পথসভায় এভাবে বক্তব্য দিয়েছেন উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সানাউল্লাহ। ১ এপ্রিল তিনি এই বক্তব্য দিলেও সম্প্রতি তাঁর এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছাত্রদল নেতা সানাউল্লাহর বাড়ি সেনবাগ পৌরসভার বিন্নাগনি এলাকায়।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি পাঁচ মিনিটের। পথসভায় দেওয়া বক্তব্যে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিজের এলাকা বিন্নাগনির মানুষের ওপর হামলা নির্যাতন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন সানাউল্লাহ। বিএনপির নামে এখন আবারও হামলাকারী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সক্রিয় হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
সেনবাগ পৌরসভার আরেক এলাকা অর্জুনতলার বাসিন্দাদের ৯০ ভাগ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মন্তব্য করে সানাউল্লাহ বলেন, এই অর্জুনতলা ১৬টি বছর বিন্নাগনিকে ফিলিস্তিন বানিয়ে রেখেছে। কিছু হইলেই বিন্নাগনি আক্রমণ। কিছুই হইলেই বিন্নাগনির ছেলেদের নামে, নেতাদের নামে মামলা। ১৬ বছর আমরা ঠিক মতে ঘরে ঘুমাইতে পারিনি।
তিনি বলেন, এই অর্জুনতলার নেতৃত্বে ২০১৮ সালে আমাদের বিন্নাগনি কেন্দ্রে হামলা হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের আন্দোলনের পরে আমাদের অনেক নেতা-কর্মীর গায়ে হাত দেওয়া হয়েছে। আমরা তখনো বিচার চাই নাই, এখনো বিচার চাই না।
নতুন করে হামলার চেষ্টা হলে প্রতিহত করার কথা জানিয়ে সানাউল্লাহ তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমার কোনো ভাইয়ের ওপর, আমাদের কোনো নেতা-কর্মীর ওপর, যদি কেউ আক্রমণ করার দুঃসাহসও দেখান আপনারা বিএনপি নয়, যত বড় বিএনপি হন, যত বড় আওয়ামী লীগের দালাল হন, আপনাদের আমরা একবিন্দু পরিমাণও ছাড় দিব না।
দলের একটি অংশের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আপনারা কত বড় বিএনপি আমরা জানি। আপনারা আওয়ামী লীগের দালালি করেন। আপনারা মামলা থেকে বাঁচতেন। এখন কেউ কবির গ্রুপ, কেউ টিপু গ্রুপ, কেউ দুলাল গ্রুপ, কেউ মামুন গ্রুপ, কেউ রিপন গ্রুপ। তিনি আরও বলেন, আজ আট মাস সেনবাগের আওয়ামী লীগের যত নেতা আছেন, সবাই ঘরে ঘুমান। আমাদের দলের লোকেরাই তাঁদের দালালি করে। আপনারা কই ছিলেন ১৬ বছর? আপনারা বলেন, আমরা জুনিয়র, আপনারা বিদেশ করেছেন। আপনারা মামলা থেকে বাঁচার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের টাকা দিতেন। আপনাদের শ্যালক-সমুন্দিরা আওয়ামী লীগ করে। কখনো মোরশেদ সাহেবের গ্রুপ, কখনো মানিক সাহেবের গ্রুপ। বিন্নাগনির এমন কোনো লোক নাই যারা আওয়ামী লীগ দ্বারা নির্যাতিত হন নাই।
সানাউল্লাহ যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন পুলিশের একটি গাড়ি পথসভার পাশ দিয়ে যেতে দেখা যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সানাউল্লাহর এই বক্তব্যের পর থেকে অর্জুনতলা এলাকার বাসিন্দাদের একটি অংশ আতঙ্কে রয়েছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে তাঁরা নাম প্রকাশ করে মতামত দিতে রাজি হননি।
বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সানাউল্লাহ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ৫ আগস্টের আগে বিএনপি করার লোক পাইনি। আগে যাঁরা আওয়ামী লীগ করত, তাঁদের পরিবার এখন বিএনপি পরিবার হয়ে গেছে। তাঁরা এখন বিএনপি নিয়ে মাথা ঘামান। তাঁদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়তে গিয়ে কথাগুলো বলেছি। তবে এভাবে বলা ঠিক হয়নি, নেতা হিসেবে আরও সহনশীল হয়ে বক্তব্য দেওয়া উচিত ছিল।
বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মিজানুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ছাত্রদল নেতার বক্তব্যের ভিডিওটি তিনি দেখেননি। তিনি যে দিন বক্তব্য দিয়েছিলেন, ওই সময় তিনি ছুটিতে ছিলেন।