Logo

রাজনীতি    >>   দেশের স্বার্থে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন মোদি-ইউনূস

দেশের স্বার্থে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন মোদি-ইউনূস

দেশের স্বার্থে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন মোদি-ইউনূস

Progga News Desk:

ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের পর অনুষ্ঠিত বৈঠকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি দুই দেশের সম্পর্কের ‘চরম টানাপোড়েন’ দূর করতে নিজেদের উদ্বেগের বিষয়গুলো একে অন্যকে বলেছেন। কোনো কোনো ইস্যুতে দুই নেতা পাল্টা বক্তব্য দিয়েছেন। আবার শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ও আলোচনায় এসেছে।

তবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ আর ভারতের শীর্ষ নেতারা দুই দেশের জনগণের স্বার্থে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। বিশেষ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আলোচনায় বলেছেন, ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের কেন্দ্রে মানুষ। দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক মানুষের স্বার্থে। সম্পর্কটা কোনো ব্যক্তিবিশেষ বা দলকে ঘিরে নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে এ বার্তা বাংলাদেশের জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন নরেন্দ্র মোদি।

গত শুক্রবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের সাংরিলা হোটেলে আধা ঘণ্টার বেশি সময়ের ওই বৈঠকে দুই শীর্ষ নেতা অতীত আর বর্তমানের বিষয়গুলো সামনে এনেছেন সম্পর্কের ভবিষ্যতের স্বার্থে। আর আলোচনাজুড়ে ছিল দুই দেশের প্রসঙ্গগুলো।

অধ্যাপক ইউনূস চীনের কাছে নদী ও পানি ব্যবস্থাপনার ৫০ বছরের মহাপরিকল্পনা চেয়েছেন। তবে কি চীন প্রসঙ্গটি ব্যাংককের আলোচনায় ঊহ্য থেকে গেল!

শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ওই বৈঠকে উপস্থিত সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে যে এটা নির্ভর করছে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের ওপর। শেখ হাসিনার বিচারপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার বিষয়টিও এসেছে।

ইউনূস-মোদির প্রতীক্ষিত বৈঠকটি এমন এক সময়ে হলো, যার ঠিক এক সপ্তাহ আগে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বেইজিংয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। বেইজিংয়ের সেই বৈঠকে ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীর তিস্তার প্রস্তাবিত প্রকল্পে চীনের ঠিকাদারদের স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। অধ্যাপক ইউনূস চীনের কাছে নদী ও পানি ব্যবস্থাপনার ৫০ বছরের মহাপরিকল্পনা চেয়েছেন। তবে কি চীন প্রসঙ্গটি ব্যাংককের আলোচনায় ঊহ্য থেকে গেল!

ইউনূস-মোদির বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে বাংলাদেশ-ভারতের শীর্ষ নেতাদের আলোচনায় সরাসরি ‘চীন’ শব্দটি উল্লেখ না থাকলেও বিষয়টি এসেছে। নরেন্দ্র মোদি আলোচনার এক পর্যায়ে বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্কের মাঝে ‘তৃতীয় পক্ষের’ কোনো প্রয়োজন নেই। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন, তার অভ্যুদয়—সব মিলিয়ে দুই দেশ একে অন্যকে যতটা জানে, বোঝে, তা নিশ্চয় অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নয়! কাজেই বাংলাদেশের সফলতা, সংকটে সব সময় পাশে থাকার বাসনা ভারতের।

সংখ্যালঘুদের বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ এলে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের যে ভূমিকা রয়েছে, সেটা ভারত উল্লেখ করেছে। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্যাতনের বেশির ভাগ ঘটনা ৫ থেকে ৮ আগস্ট। যার সঙ্গে বিশেষ কোনো সম্প্রদায় নয়, রাজনৈতিক কারণ জড়িত। তারপরও বাংলাদেশ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখতে ভারতের সাংবাদিকদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

দুই দেশ ভবিষ্যৎমুখী ও জনগণকেন্দ্রিক সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছে। তাই খোলাখুলিভাবে শীর্ষ দুই নেতা চ্যালেঞ্জগুলোর কথাও বলেছেন। কিন্তু গত প্রায় আট মাসের চরম টানাপোড়েনের জেরে ভুক্তভোগী হয়েছেন সাধারণ জনগণ। বাংলাদেশের জনগণের জন্য ভারতীয় ভিসা একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এতে ভারতে তো বটেই, ভারত থেকে তৃতীয় দেশের ভিসা পাওয়া বাংলাদেশের মানুষের জন্য প্রায় দুষ্কর হয়ে পড়েছে। আর ভিসার হার নেমে আসায় দুই দেশের মধ্যে বাস-ট্রেন যোগাযোগও প্রায় কমে গেছে। অথচ শুক্রবারের আলোচনায় ভিসা আর যোগাযোগের প্রসঙ্গগুলো আসেনি।

বৈঠকে সীমান্ত হত্যার বিষয়টি এসেছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি সব সময় কষ্ট অনুভব করেন। ভারতকে এই ঘটনাগুলো প্রতিরোধের জন্য উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাণহানির সংখ্যা কমাতে একসঙ্গে কাজ করলে কেবল অনেক পরিবারই বড় ধরনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে না, বরং আস্থা ও আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে এবং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সাহায্য করবে।

এ বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা শুধু আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালায় এবং মৃত্যুর ঘটনাগুলো ভারতের ভেতরে ঘটে। উভয় নেতা বিষয়টি নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ব্যাংককে উপস্থিত কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, বিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলনে নেতাদের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির কথা হয়েছে। অর্থাৎ বৃহস্পতিবারের সেই অনানুষ্ঠানিক আলোচনার পর দিনের বৈঠকের জন্য একধরনের ইতিবাচক আবহ তৈরি করেছিল। সব মিলিয়ে ব্যাংককে শুক্রবারের আলোচনা ইতিবাচক হলেও দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থান জোরালোভাবে তুলে ধরেছে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের সম্পর্ক এখন যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক স্তরে যোগাযোগটা জরুরি ছিল। এখন ইউনূস-মোদি বৈঠকের পর সময় বলে দেবে, সম্পর্ক এগিয়ে দুই পক্ষ কতটা উদ্যোগী ভূমিকা নিচ্ছে।

ব্যাংককের আলোচনায় উপস্থিত কয়েকজন কূটনীতিক আভাস দিয়েছেন, এক বৈঠকেই সব সংকট কেটে যাবে, এমন উচ্চাশা কোনো পক্ষই করেনি। বৈঠক হওয়াটাও ইতিবাচক। কারণ, দুই শীর্ষ নেতাই মুখোমুখি বসে কথা বলেছেন। আর বৈঠকের জন্য তৈরি হয়েই ব্যাংককে একে অন্যের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রাসঙ্গিকভাবেই এসেছে ব্যক্তিগত যোগাযোগের স্মৃতিচারণা। সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার যে প্রত্যয় দুই নেতা ব্যক্ত করেছেন, তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপই নির্ধারণ করবে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার গতিমুখ।সাবেক রাষ্ট্রদূত ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি এম হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, দুই নেতা প্রথমবারের মতো আলোচনায় বসে দুই দেশের আগের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সামনাসামনি বসে এ বিষয়গুলো আলোচনায় উত্থাপনের ফলে তা সুরাহার জন্য তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক একধরনের দায়বোধ তৈরি হতে পারে। ফলে দুই নেতা হয়তোবা নতুন করে ভাবার সুযোগ পাবেন। এতে দুই দেশের সম্পর্কে হয়তো গতির সঞ্চার হতে পারে। দুজনের জন্যই সম্পর্ককে সাবলীল রাখার একধরনের চাপ তৈরি হতে পারে। ফলে সামগ্রিকভাবে ব্যাংককের বৈঠককে ইতিবাচকই বলা চলে।