
যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়; জ্যাকসন হাইটসে সেমিনারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক :
‘ভয় নয়, সচেতনতা ও সতর্কতাই রক্ষা করবে অভিবাসীদের’ — অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার
৫ এপ্রিল, শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ সেমিনার— “যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভা।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মিডিয়া কর্মী ও অভিনেতা শামীম শাহেদ, এবং প্রবন্ধ পাঠ করেন সাংবাদিক দর্পণ কবীর।
সেমিনারের মূল আলোচক ও অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার, যিনি সরাসরি অভিবাসীদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব দেন ও বাস্তবমুখী দিকনির্দেশনা তুলে ধরেন।
প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, “যুক্তরাষ্ট্র মূলত অভিবাসন নির্ভর একটি রাষ্ট্র। তবে বর্তমানে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ, আইস অভিযান এবং অভিবাসন নীতির কঠোর প্রয়োগ পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। প্রায় ৩০ লক্ষাধিক অভিবাসন মামলা বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে।”
অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার বলেন, “নতুন কোনো আইন না থাকলেও, পুরাতন আইনগুলোর প্রয়োগ এখন অনেক কঠোরভাবে হচ্ছে। আইস গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে এটি স্থায়ী নয়—সতর্ক, সৎ ও সচেতন থাকাই এখন প্রধান করণীয়।”
তিনি আরও বলেন, “গ্রিনকার্ডধারীরা দীর্ঘদিন দেশ ছেড়ে থাকলে তা শর্তভঙ্গের শামিল। ইমিগ্রেশন অফিসাররা সবকিছু যাচাই করে থাকেন, বিশেষ করে বন্দরে প্রবেশের সময়।”
তিনি বিশেষভাবে অনুরোধ করেন যেন কেউ ভুল বা মিথ্যা তথ্য না দেন, কারণ এটি পরবর্তীতে গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে।
মানবাধিকার সংগঠন ড্রাম-এর প্রতিনিধি রাসেল আহমেদ বলেন, “এই সময় বৈরী হলেও আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নিজেরা যেন নিজের ক্ষতি না করি। বিশেষ করে রাজনৈতিক আশ্রয়ের নামে ফাঁদে পা না দিই।” তিনি আইস-এর হাতে আটক হলে ‘চুপ থাকার’ অধিকার ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
মূলধারার রাজনীতিবিদ গিয়াস আহমেদ বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতির জন্য রাজনৈতিক দোষারোপ নয়, বরং সবাইকে সতর্ক, সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলতে হবে। আজকের সংকট একদিন কেটে যাবে, কিন্তু মিথ্যা তথ্য দিলে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।”
প্রবাস পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ এবং ট্রাভেলস ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, অতিরিক্ত ভীতিকর প্রচারণার কারণে অভিবাসীরা এখন গ্রীনকার্ড থাকা সত্ত্বেও দেশে গিয়ে ফিরে আসতে ভয় পাচ্ছেন, যা ট্র্যাভেল ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
সভাপতির ভাষণে আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি শওকত ওসমান রচি বলেন, “প্রবাসীদের জন্য সঠিক তথ্য ও আইনি পরামর্শ পৌঁছে দিতে প্রেসক্লাব এই ধরনের সেমিনার করে যাচ্ছে এবং আগামীতেও করে যাবে।”
এছাড়া সেমিনারের প্রশ্নোত্তর পর্বে অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার জানান, স্টুডেন্ট ভিসায় আসার ক্ষেত্রে এখনও কোনো বাধা নেই, তবে ভিসা পাওয়ার আগে প্রার্থীর ব্যাকগ্রাউন্ড কঠোরভাবে যাচাই করা হচ্ছে।
মানবাধিকার কর্মী রাসেল আহমেদ জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কিছু ছাত্রছাত্রী আন্দোলনে জড়িত হওয়ায় ইতিমধ্যেই আইস-এর নজরদারির শিকার হয়েছেন। তিনি ছাত্রছাত্রীদেরকে রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা এবং আচরণে বিশেষ সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
সেমিনারে বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, আইনি প্রক্রিয়ার যথাযথ অনুসরণ, সতর্কতা, এবং মিথ্যা তথ্য না দেওয়া—এই তিনটি বিষয় এখন প্রতিটি অভিবাসীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন পরিস্থিতি কঠিন হলেও, তা মোকাবেলায় সচেতনতা, আইনজ্ঞান ও ঐক্যই সবচেয়ে কার্যকর পথ।