
বাংলাদেশে নতুন টাকা ছাপাতে এবার খরচ হচ্ছে তিন গুণ
Progga News Desk:
বাংলাদেশে কাগজের নোটের প্রচলন বেশি।নোট কাগজের হবার কারনে এর স্থায়িত্বও সাধারনত অল্প সময়ের জন্য হয়ে থাকে।ছয় মাস বা তার কিছু বেশি সময়ের মধ্যেই অধিকাংশ নোট ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। কয়েন দীর্ঘস্থায়ী,কিন্তু খরচ বেশি । ফলে কয়েক বছর আগে পলিমার নোট ছাপানো হয়েছিল।
পুরোনো নোট তুলে নিয়ে নতুন নোট ছাপতে বছরে সরকারের খরচ হয় সাড়ে চার থেকে পাঁচশ কোটি টাকা। এবার সেই খরচ ঠেকতে পারে দেড় হাজার কোটিতে, অর্থাৎ তিন গুণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা ছাপানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবহারের পদ্ধতিগত কারণে ছাপানো নতুন কাগজের নোটের স্থায়িত্ব কমছে। বিপরীতে খরচ বেশি পড়লেও ধাতব কয়েনের স্থায়িত্ব অনেক বেশি। ছেঁড়া-ফাটা নোট বিনিময় করে সেগুলো পুড়িয়ে ফেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব নোটের বিপরীতে পরবর্তীসময়ে ইস্যু করা হয় নতুন নোট। চাহিদা অনুযায়ী প্রতি বছর শুধু নতুন নোট ছাপাতে সরকারের বিপুল টাকা খরচ হয়। এই খরচের লাগাম টানতে ক্যাশলেস কিউআর (কুইক রেসপন্স) লেনদেনে ঝুঁকছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন টাকার নকশায় পরিবর্তন আনছে সরকার। সব ধরনের নোটেই নকশা পরিবর্তন হবে। এর আগে ডিজাইন অক্ষুণ্ন রেখে শুধু প্রিন্ট করা হতো। এবার নতুন নোটে থাকবে না শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। যুক্ত হবে ধর্মীয় স্থাপনা, বাঙালি ঐতিহ্যসহ জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি। নতুন ডিজাইনের জন্য রয়েছে পারিশ্রমিক। আর আগের তুলনায় স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে নোটের পরিমাণ। কারণ, পুরোনো ডিজাইনের নোট ধীরে ধীরে বাজার থেকে তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর আগে টাকা ছাপতে বছরে পাঁচশ কোটি টাকার মতো খরচ হলেও এবার খরচ পড়বে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।
টাকা ছাপাতে হলে রিজার্ভ ও পর্যাপ্ত গোল্ড থাকতে হবে। চাইলেই টাকা ছাপানো যায় না, কিছু বাধ্যবাধকতা আছে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সরকার যদি চায় সহায়তা নিতে, সেক্ষেত্রে সরকারের অনুরোধে একটা বাধ্যবাধকতা চলে আসে। সরকার, সেন্ট্রাল ব্যাংক ও বোর্ডের অনুমোদনের মাধ্যমে টাকা ছাপানো হয়।
তবে ঠিক কত টাকার নতুন নোট ছাপা হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীলরা। নতুন ডিজাইনসহ নোট বাজারে আনতে ঈদ সামনে রেখে এবার কোনো নতুন নোট বাজারে ছাড়েনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্র জাগো নিউজকে জানায়, ছাপানো নোট এখন আর আগের মতো বেশিদিন টিকছে না। মাত্র ছয় মাসেই নষ্ট হচ্ছে, যে নোটগুলো (ছেঁড়া-ফাটা) বাংলাদেশ ব্যাংকে সংরক্ষণ করার পর তা পুড়িয়ে ফেলা হয়। পুড়িয়ে ফেলা ব্যবহার অযোগ্য নোট ও বাজার সার্কুলেশন বা অর্থের প্রবাহের বিষয়টি দেখেই পরে নতুন নোট ছাপানো হয়। এক্ষেত্রেও মার্কেট টুলস ব্যবহার করে পর্যালোচনা করে দেখা হয়। সেখানে উঠে আসে কী পরিমাণ নতুন টাকার দরকার পড়বে। সেভাবেই ছাপিয়ে বাজারের চাহিদার ভিত্তিতে ছাড়া হয়।
বিভাগটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এবার সব ধরনের নোটে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। পুরো জাতির দাবি নতুন নকশা। সে আলোকে নোট ছাপানো হচ্ছে। খরচ এখন ফ্যাক্টর নয়। তবে কয়েনের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই তিন গুণ পর্যন্ত খরচ বাড়বে এবার।
কোন নোট ছাপাতে কত খরচ হয়?
এবারের হিসাবটা একটু ভিন্ন হওয়ায় নতুন নোট ছাপাতে লাগছে বাড়তি টাকা। তবে সাধারণ সময়ে নোটপ্রতি খরচের একটি হিসাব আছে। এ হিসাব শুধু ছাপানোর জন্য প্রযোজ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ১০০০ টাকার নোট ছাপাতে ৫ টাকা ও ৫০০ টাকার নোট ছাপানোয় খরচ পড়ে ৪ টাকা ৭০ পয়সা। এছাড়া ২০০ টাকার নোটে তিন টাকা ২০ পয়সা, ১০০ টাকার নোটে ৪ টাকা, ১০, ২০ ও ৫০ টাকার সবগুলো নোটই দেড় টাকা খরচ পড়ে। এছাড়া ৫ টাকা, ২ টাকার নোট ছাপাতে খরচ পড়ে ১ টাকা ৪০ পয়সা। সবচেয়ে বেশি খরচ হয় কয়েন তৈরিতে। প্রতিটি কয়েনে সমপরিমাণ টাকা খরচ পড়ে যায়। বিশ্বব্যাপী কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে এই খরচ কিছুটা বেড়েছে।