Logo

সাহিত্য সংস্কৃতি    >>   রাজনৈতিক ক্ষমতায়নই সংখ্যালঘু মুক্তির পথ

রাজনৈতিক ক্ষমতায়নই সংখ্যালঘু মুক্তির পথ

রাজনৈতিক ক্ষমতায়নই সংখ্যালঘু মুক্তির পথ

সংখ্যালঘু দমন ও নিপীড়নের ইতিহাস:
 
“যে জাতির দল নাই, সে জাতির বল নাই; যে জাতির রাজা নাই, সে জাতি তাজা নাই।”
 
বাংলার সনাতনী সম্প্রদায় ১৯৪৭ সালের দেশভাগের আগ থেকেই নিপীড়ন, অত্যাচার ও বঞ্চনার শিকার। আমাদের বিভক্তি ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবে আমরা বারবার ইতিহাসের নিষ্ঠুর চক্রের শিকার হয়েছি । ১৯৪৬: গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং ও নোয়াখালী হত্যাকাণ্ড • ১৯৪৭: দেশভাগ—যার ফলে সনাতনী সম্প্রদায়ের নিরাপত্তাহীনতা চরম আকার ধারণ করে।• ১৯৪৯: প্রজাস্বত্ব আইন প্রণয়ন, যা আমাদের অর্থনৈতিক ভিত দুর্বল করে দেয় এবং লক্ষ লক্ষ একর সম্পত্তি বেদখল হয়।
১৯৬৫: পাক-ভারত যুদ্ধের সময় অসংখ্য হিন্দু তাদের সহায়-সম্পত্তি ছেড়ে দেশত্যাগে বাধ্য হয়।১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও সম্পত্তি লুটপাট হয়। ১৯৭৫: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পায়।
 
১৯৯২: বাবরি মসজিদ ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রায় ২৮,০০০ বাড়ি, ৩,৫০০ ধর্মীয় স্থান ধ্বংস হয় এবং ২,৫০০ নারী ধর্ষণের শিকার হন।• ২০০১: নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় ২৭ জন নিহত, ২৭০ জন নারী ধর্ষিত, ৪,০৪৯ জন আহত, ৩৮,৫০০ পরিবার উচ্ছেদ হয়।• ২০১৩: বিভিন্ন সহিংসতায় ৪ জন নিহত, ১১২টি মন্দির ধ্বংস, ৩৪৮ পরিবার উচ্ছেদ হয়।• ২০০৮-২০২৪: রামু, নাসিরনগর, শাল্লা, গঙ্গাচড়া, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে।• ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর: প্রায় ৩,০০০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
 
বৈষম্যমূলক আইন ও সম্পত্তি দখল:
 
১. The East Bengal (Emergency) Requisition of Property Act, 1948
2. The East Bengal Evacuees (Administration of Immovable Property) Act, 1951
3. The East Pakistan Disturbed Persons (Rehabilitation) Ordinance, 1964
4. The Enemy Property Act (পরবর্তীতে Vested Property Act)
 
১৯৬৪-১৯৯১ সালের মধ্যে আনুমানিক ৫৩ লক্ষ হিন্দু বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।
 
রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের প্রয়োজনীয়তা:
 
অত্যাচার-নিপীড়ন ও বঞ্চনার শিকার থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হলো নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি ও সংগঠন গঠন করা।
স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন একক দলীয় সমর্থনের ফলে সনাতনী সম্প্রদায় রাজনৈতিকভাবে শূন্য হয়ে পড়েছে। তাই, আমাদের একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা জরুরি।
 
বাংলাদেশ সনাতন পার্টির প্রতিষ্ঠা:
•২০১৭ সালে বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ আত্মপ্রকাশ করে।
• ২০১৮ সালে ঢাকা-৪ ও বাগেরহাট-৪ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হয়।
• ২০২২ সালের জুনে বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (BSP) আত্মপ্রকাশ করে এবং ২৬ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।
• নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা হলেও কিছু বিশ্বাসঘাতকের কারণে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়েও সম্ভব হয়নি।
 
নিবন্ধন ও সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন:
 
একটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন করতে হলে—
• ১০০টি উপজেলায় কমপক্ষে ২০০ জন সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন।
• ১০০টি অফিস স্থাপন করতে হবে।আমরা চাই, সকল সনাতনী সংগঠন এক প্ল্যাটফর্মে এসে ঐক্যবদ্ধ হোক। বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট গঠনের মাধ্যমে সকল সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব।
 
আপনার করণীয়:
 
✔ বাংলাদেশ সনাতন পার্টির নিবন্ধনের জন্য ২০০ জন সমর্থন প্রদান করুন।
✔ সংগঠনের সদস্য হন এবং অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করুন।
✔ সনাতনী সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষায় সচেতন হন ও রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হোন।
 
এটি আমার ব্যক্তিগত মতামত। আপনার ভিন্নমত থাকতেই পারে, সেটিও আপনাদের নিজস্ব অধিকার।
 
আসুন, সকল বৈষম্য দূর করে অসাম্প্রদায়িক, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
 
লেখক
অ্যাড. সুমন কুমার রায়
প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (BSP)
অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ ।
তথ্য সহযোগিতা: মাইনরিটি কনভেনশন রিপোর্ট