
শিশুর ভবিষ্যৎ রক্ষায় জাতীয় ঐক্য এখন সময়ের দাবি: শেখ হাসিনার উন্নয়ন বনাম ড. ইউনূসের শাসনের বিপর্যয়
- By N/A --
- 16 March, 2025
শিশুর ভবিষ্যৎ রক্ষায় জাতীয় ঐক্য এখন সময়ের দাবি: শেখ হাসিনার উন্নয়ন বনাম ড. ইউনূসের শাসনের বিপর্যয়
(Writer Sayed Abedin is a Solicitor and Barrister}
১৭ই মার্চ জাতীয় শিশু দিবস, যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীর সাথেই পালিত হয়। এই দিনে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা, শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীরভাবে ভাবার আহ্বান জানাই। বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দিচ্ছে।
শেখ হাসিনার শাসনে শিশুর উন্নয়ন
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে শিশু কল্যাণে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছিল। তার সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। ইউনিসেফের সহায়তায় শিশু সুরক্ষায় সমাজসেবা কর্মীর সংখ্যা ৪০% বৃদ্ধি করা হয়, যা শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখে।
এর ফলে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমে আসে। ২০০৯ সালে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখ জীবিত জন্মে ২৬৯ থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ১৬৫-এ নেমে আসে। এছাড়া দারিদ্র্যের হার ১৮.৭% এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৫.৬% পর্যন্ত কমে আসে, যা জনগণের জীবনমান উন্নয়নে শেখ হাসিনার সরকারের সফলতার প্রতিফলন। শেখ হাসিনার সরকার শিক্ষাকেও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। তিনি শিশুদের শিক্ষা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সবসময় গুরুত্ব দিয়েছেন।
ড. ইউনূসের শাসনে বিপর্যয়
২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে ক্ষমতায় আসে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অবৈধ সরকার, যার পেছনে ছিল কট্টরপন্থী ইসলামি সংগঠন ছাত্র সমন্বয়ক। ক্ষমতা গ্রহণের পর তাদের নেওয়া বিভিন্ন অমানবিক সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের শিশুদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে।
ক্ষমতায় এসেই ড. ইউনূসের সরকার ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কার্ড বাতিল করে। এই কার্ডের মাধ্যমে চার মিলিয়নেরও বেশি দরিদ্র পরিবার ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেত। টিসিবি কার্ড বাতিলের ফলে লক্ষ লক্ষ শিশু অপুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে পড়েছে।
শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধি
বর্তমান সরকারের শাসনে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। ড. ইউনূসের প্রশাসন বহু সন্ত্রাসীকে বিচারের কোনো প্রক্রিয়া ছাড়াই কারাগার থেকে মুক্তি দেয়, যার ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে। এতে শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ, বিশেষ করে যৌন সহিংসতা, ব্যাপকহারে বেড়ে যায়।
বেদনাদায়কভাবে, সাত বছর বয়সী শিশু আসিয়ার ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড এবং আরেকজন আট বছর বয়সী হিন্দু শিশুর ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণ করে যে, বর্তমান সরকারের শাসনে শিশুরা কতটা ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি
বর্তমান সরকার ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ৮ই আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত সকল অপরাধের জন্য অপরাধীদের দায়মুক্তি দিয়ে একটি প্রেসিডেন্টিয়াল অধ্যাদেশ জারি করে। এই অধ্যাদেশের ফলে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
ড. ইউনূস বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন যে দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল। অথচ বাস্তবতা হলো, আগের বছরের তুলনায় দেশে অপরাধের হার অন্তত ৫০% বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অভাব থাকায় অনেক অপরাধের খবর প্রকাশই করা হয় না, ফলে প্রকৃত পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।
শিশুদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় জাতীয় ঐক্যের ডাক
বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের শিশুদের ভবিষ্যৎকে চরম অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। সহিংসতা বৃদ্ধি, মৌলিক সেবা কমে যাওয়া এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মৌলবাদী গোষ্ঠীর গোপন কার্যক্রম শিশুদের ভবিষ্যৎকে গভীর সংকটে ফেলেছে।
আমরা কি আমাদের শিশুদের এই বিপন্ন অবস্থায় দেখতে চাই? আমরা কি মৌলবাদী শক্তির হাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা বিলিয়ে দিতে চাই? এখন সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ানোর। দেশের আপামর জনসাধারণ, পিতা-মাতা, শিক্ষক, তরুণ সমাজ ও সমাজকর্মীদের একসাথে সংগঠিত হয়ে শিশুদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় সোচ্চার হতে হবে।
শেখ হাসিনার সরকার যেখানে শিশুদের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিল, সেখানে ড. ইউনূসের সরকার সেই অর্জনগুলোকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। জাতীয় শিশু দিবসে দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানাই – আসুন, আমরা দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হই। আমাদের সন্তানদের জন্য নিরাপদ ও উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে আমরা একসাথে এগিয়ে যাই।
উপসংহার
বাংলাদেশের শিশুদের ভবিষ্যৎ আজ গভীর সংকটে। ড. ইউনূসের শাসনামলে শিশুদের কল্যাণে পূর্বের অর্জন নষ্ট হয়েছে এবং অপরাধ ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি শিশুদের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে। দেশের সবচেয়ে অসহায় জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে এখনই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার সময় এসেছে।