তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করল হাইকোর্ট
- By Jamini Roy --
- 17 December, 2024
হাইকোর্ট সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক অবৈধ ঘোষণা করে বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের রায় দিয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন।
রায়ে হাইকোর্ট উল্লেখ করেছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর একটি অংশ হয়ে গিয়েছিল। আদালত আরও জানায়, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করা হয়েছে।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, “সংবিধানের মূল কাঠামো হচ্ছে গণতন্ত্র। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রধান মাধ্যম। সংবিধানের সৌন্দর্য হচ্ছে জনগণের ক্ষমতায়ন এবং জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।”
২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে আওয়ামী লীগ সরকার। এই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। পাশাপাশি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় এবং অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করলে রাষ্টদ্রোহিতার দায়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান যুক্ত করা হয়।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান আনা হয়। তবে এটি ছিল আগে থেকে বিদ্যমান নিয়মের পরিবর্তন। একই সঙ্গে সংবিধানে ৫৫টি পরিবর্তন আনা হয়, যার মধ্যে অনেকগুলো নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। হাইকোর্ট প্রাথমিক শুনানি শেষে ১৯ আগস্ট রুল জারি করে। রুলে আদালত জানতে চায়, পঞ্চদশ সংশোধনী কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং অবৈধ ঘোষণা করা হবে না।
শুনানিতে আবেদনকারীদের আইনজীবীরা বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করায় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ রুদ্ধ হয়েছে। সংশোধনীতে একই সঙ্গে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ও ধর্মনিরপেক্ষতার মতো পরস্পরবিরোধী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা সাংঘর্ষিক।
দীর্ঘ শুনানির পর গত ৪ ডিসেম্বর রিটটির শুনানি শেষ হয়। বিএনপি, জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন রিটে পক্ষভুক্ত হয়। প্রায় সকল পক্ষই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের পক্ষে মত দেন।
১৭ ডিসেম্বর সকালে হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা শুরু করে। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন। রায়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু ধারা বাতিল করা হয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রিটকারীদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া শুনানি করেন। বিএনপির পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এবং অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল অংশ নেন।
জামায়াতের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির এবং ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী। ইনসানিয়াত বিপ্লবের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।
হাইকোর্টের এ রায় রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রায়ের ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল হওয়ায় আগামীর জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।