মাহমুদ আব্বাস বেছে নিলেন নিজের উত্তরসূরি
- By Jamini Roy --
- 02 December, 2024
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সম্প্রতি শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিজের উত্তরসূরি হিসেবে রাওহি ফাত্তৌহের নাম ঘোষণা করেছেন। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে, যদি কখনো আব্বাস শারীরিক অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তখন রাওহি ফাত্তৌহ ফিলিস্তিনের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন। এই পদ তিনি ৯০ দিনের জন্য গ্রহণ করবেন, যা পরবর্তী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। রাওহি ফাত্তৌহ বর্তমানে ফিলিস্তিনি জাতীয় পরিষদের স্পিকার এবং ২০০৪ সালে ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পর একই দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ফিলিস্তিনের গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে ইসরাইলের নৃশংস হামলা চলছে। এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৪৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, বহু মানুষ আহত ও অনাহারে রয়েছে। তবে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাহমুদ আব্বাসের ভূমিকা ছিল অনেকটা নিষ্ক্রিয়। তার অক্ষমতা এবং দীর্ঘদিন ধরে কোনো নির্বাচনের আয়োজন না করার কারণে তার বিরুদ্ধে চাপা অসন্তোষ বেড়েছে। ২০০৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি দেশে কোনো নির্বাচনের আয়োজন করেননি, যা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
এদিকে, মাহমুদ আব্বাসের এই সিদ্ধান্তের পেছনে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চাপও রয়েছে। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা জানায়, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্র এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর চাপের কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে, সৌদি আরব ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে ছয় কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে এই অর্থের শেষ কিস্তি এক কোটি ডলার দেয়ার জন্য আব্বাসকে তার উত্তরসূরি নির্বাচন করতে শর্ত দেয়া হয়েছিল।
মিডল ইস্ট আইয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আব্বাসের এ সিদ্ধান্তের পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, গাজায় যুদ্ধের পর বেসামরিক বিষয়গুলো পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে, তবে এতে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কোনো প্রভাব থাকবে না। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরাইলের ভূখণ্ডের সাথে পশ্চিম তীরের কিছু অংশ যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে, যার ফলে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের আর বিশেষ কোনো ভূমিকা থাকবে না বলে মনে করছেন অনেক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা।
এছাড়া, আব্বাস ফাতাহ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে মাহমুদ আল-আলোউলকে বেছে নিয়েছেন। তার পরবর্তী নেতৃত্বের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা ফাতাহ দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফাতাহ, যা ফিলিস্তিনের সবচেয়ে বড় এবং পুরোনো রাজনৈতিক দল, তার নেতৃত্বে আরও পরিবর্তন আসছে।
অন্যদিকে, আব্বাস ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা (পিএলও)-এর প্রধান। এই স্বাধীনতাকামী সংগঠন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। তাদের পরবর্তী নেতা হিসেবে পিএলও-এর সেক্রেটারি জেনারেল হুসেইন আল-শেখের নামও সামনে আসছে। আব্বাসের পরবর্তী নেতৃত্বে এই পরিবর্তন ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।