Logo

অর্থনীতি    >>   সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর জন্য তারল্য সহায়তার আহ্বান

সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর জন্য তারল্য সহায়তার আহ্বান

সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর জন্য তারল্য সহায়তার আহ্বান

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সবল ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সোমবার (১১ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন গভর্নর। এই বৈঠকে তিনি সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলোর জন্য তারল্য সহায়তা দেওয়ার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন।

বৈঠকে উপস্থিত ব্যাংকগুলো এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার, দুর্বল ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা, ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার, ঋণ অবলোপন নীতিমালা, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষা, এবং সামগ্রিক অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে সরকারি খাতের সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক এবং বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, সিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ্–বাংলা ব্যাংক, পুবালি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীরা অংশ নেন।

গভর্নর বলেন, যেসব ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা ভালো, তাদের উচিত সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া। তিনি সতর্ক করে বলেন, যেসব ব্যাংক ঋণপত্র বা এলসি দায় পরিশোধে বিলম্ব করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানানো হয়, ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং এর মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য কিছু ব্যাংক অনেকটাই ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।

বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হয়। ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার কোনো বড় সংকট নেই। তবে ঋণপত্রের মেয়াদোত্তীর্ণ দায় ৩০-৪০ কোটি ডলার পর্যায়ে নেমে এসেছে, যা আগামী জানুয়ারির মধ্যে পরিশোধ করা হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদেশি দায় পরিশোধের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয় এবং সতর্ক করে বলে, বিলম্ব হলে ঋণপত্র খোলা বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। এছাড়াও, যাতে কেউ ডলার মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি না করে, তা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

বৈঠকে ক্রেডিট কার্ডের বর্তমান সুদের হার পুনর্বিবেচনার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তারা অনুরোধ জানান, কারণ এই ব্যবসায় পরিচালন খরচ বেশ বেশি। এছাড়া, ব্যাংক কর্মকর্তাদের জন্য ব্যাংকিং ডিপ্লোমায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক করার বিষয়েও আলোচনা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ডিপ্লোমায় উত্তীর্ণ কর্মকর্তাদের জন্য অতিরিক্ত ৫ নম্বর বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করা হয়।

ঋণ অবলোপন নীতিমালার বিষয়েও মতবিনিময় হয়। ব্যাংক কর্মকর্তারা ঋণ অবলোপনের পর পরই মামলার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান, যাতে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানানো হয়, যেসব ব্যাংকের মূলধনের ঘাটতি আছে, তারা লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে না এবং এই নির্দেশনা কঠোরভাবে পালন করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, এখন পর্যন্ত সংকটে থাকা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে মোট ৫ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির আওতায় এসব সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং আরও সহায়তার প্রয়োজন হলে অন্যান্য সবল ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।