৭ দিনের মধ্যে মাহমুদুর রহমানকে ক্ষমা চাইতে বলেছে ইসকন বাংলাদেশ
- By Jamini Roy --
- 02 November, 2024
বাংলাদেশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) সম্প্রতি আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে। মাহমুদুর রহমান, এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় ইসকনকে জঙ্গি সংগঠন এবং গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট বলে উল্লেখ করেন, যা সংগঠনটির নেতাদের মধ্যে চরম ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। ইসকনের পক্ষ থেকে তাকে সাত দিনের মধ্যে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। যদি তিনি এই সময়ের মধ্যে ক্ষমা না চান, তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি কঠোর কর্মসূচি ঘোষণারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (২ নভেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ইসকন সম্পর্কে প্রচারিত বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন বক্তব্য ও সংবাদের প্রতিবাদ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “সম্প্রতি আমরা মাহমুদুর রহমানের পক্ষ থেকে আমাদের সংগঠনের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও অসত্য হুমকি এবং নিষেধাজ্ঞার আহ্বানের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।” তিনি আরো যোগ করেন, মাহমুদুর রহমানের বক্তব্য শুধু ইসকনকে আঘাত করেনি, বরং এটি বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি, সহনশীলতা এবং সামাজিক ঐক্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
চারু চন্দ্র দাস বলেন, “আমাদের বিশ্বাস, এ ধরনের অযাচিত ও ভিত্তিহীন বক্তব্য দেশের শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য ক্ষতিকর।” তিনি মাহমুদুর রহমানকে অবহিত করে বলেন, যদি তিনি তার বক্তব্য পরিহার করে জাতির কাছে ক্ষমা চান, তাহলে তারা তাকে সাধুবাদ জানাবেন। অন্যথায়, সংগঠনটি কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করেন, “সম্প্রতি বিভিন্ন মহল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইসকন বাংলাদেশকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর গুজব ছড়াচ্ছে।” বিশেষ করে, জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে যে ছবি বা পতাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেন তারা।
চারু চন্দ্র দাস আরও বলেন, “প্রকৃতপক্ষে, ইসকনের কোনো নিজস্ব পতাকা নেই। যে পতাকাটি দেখানো হয়েছে, তার সাথে ইসকনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।” তিনি উল্লেখ করেন যে, ইসকন বাংলাদেশ সবসময় আইন ও শৃঙ্খলা মেনে চলে এবং দেশে শান্তি, সহনশীলতা ও ধর্মীয় ঐক্য বজায় রাখার জন্য দৃঢ়ভাবে কাজ করে। এই গুজবের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও আধ্যাত্মিক সংগঠনের বিরুদ্ধে ভুল ধারণা তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “ইসকন একটি অরাজনৈতিক ধর্মীয় আন্তর্জাতিক সংগঠন। আমরা শুধুমাত্র মানবজাতির কল্যাণ চাই।” তিনি আরো বলেন, ইসকন বাংলাদেশ বরাবরই সকলের প্রতি মানবিক সহমর্মিতা ও ধর্মীয় সহনশীলতার বার্তা প্রচার করেছে এবং জাতীয় সম্প্রীতি ও ঐক্যের পক্ষে কাজ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “সংখ্যালঘুদের ন্যায্য আট দফা দাবির প্রতি আমরা সংহতি প্রকাশ করি।” তারা সনাতনীদের প্রতিমা, বাড়ি-ঘর, দোকানপাট ভাঙচুর, লুট, অগ্নিসংযোগ এবং ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেন।
চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বর্তমান প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, হামলা বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।” সেইসাথে যারা গুজব ছড়িয়ে কিংবা ইসকনকে রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইসকন বাংলাদেশের সভাপতি সত্য রঞ্জন বাড়ৈ বলেন, “ইসকন একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। সারা বিশ্বের কোথাও ইসকন দ্বারা কোন ধরনের ইনসিডেন্ট ঘটেনি।” তিনি গুজবের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করেন এবং সংগঠনটির শান্তিপূর্ণ কার্যক্রমের ওপর জোর দেন।
মাহমুদুর রহমানকে ক্ষমা চাইতে আহ্বান জানিয়ে ইসকনের নেতারা বলেন, “যদি তিনি ক্ষমা না চান, তাহলে সংগঠনটি কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।”