Logo

আন্তর্জাতিক    >>   ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে বিশ্ববাজারে চরম অনিশ্চয়তা

ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে বিশ্ববাজারে চরম অনিশ্চয়তা

ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে বিশ্ববাজারে চরম অনিশ্চয়তা

Progga News Desk:

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ ও স্থগিত নীতির ফলে বিশ্ববাজারে চরম অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই অনিশ্চয়তার অবসান না হলে মন্দার চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারে।

হোয়াইট হাউস গত শুক্রবার চীনের পণ্যে আরোপিত উচ্চ হারে শুল্ক থেকে কিছু প্রযুক্তিপণ্যকে ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দেয়। স্মার্টফোন ও ল্যাপটপের মতো কিছু পণ্য ভোক্তা পর্যায়ে কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে পৌঁছে দিতে এই আয়োজন।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার বলেছেন, আগামী সপ্তাহে আমদানি করা সেমিকন্ডাক্টর চিপে নতুন শুল্কের হার ঘোষণা করা হবে। কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখানো হবে বলেও জানান তিনি।

এই ঘোষণা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, চীন থেকে আমদানি করা স্মার্টফোন ও কম্পিউটারের ওপর দেওয়া শুল্ক ছাড় আর বেশি দিন থাকছে না। সেমিকন্ডাক্টর খাতকে ঘিরে পুনর্গঠিত বাণিজ্যনীতিতে এগুলোও অন্তর্ভুক্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্বের বৃহত্তম হেজ ফান্ডের প্রতিষ্ঠাতা রে ডালিও এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বলেন, শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্র মন্দার দ্বারপ্রান্তে, যদি সঠিকভাবে বিষয়টি সামলানো না হয়, এর চেয়েও খারাপ কিছু ঘটতে পারে।

রে ডালিও আরও বলেন, ‘আমরা এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার একেবারে সীমারেখায় পৌঁছে গেছি; আমি আরও ভয় পাচ্ছি, যদি শুল্কনীতি নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়, মন্দার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটতে পারে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে করে ওয়েস্ট পাম বিচ থেকে ওয়াশিংটনে ফেরার পথে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, আমরা প্রযুক্তিপণ্য তৈরি করা অন্যান্য কোম্পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাই। কারণ, আমরা চাই আমাদের চিপ, সেমিকন্ডাক্টরসহ অন্যান্য প্রযুক্তিপণ্য দেশেই তৈরি হোক।

স্মার্টফোনের মতো পণ্যগুলো আদৌ শুল্কমুক্ত থাকবে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানান, ‘কেউ যেন অতিরিক্ত কঠোর না হয়, তাই একটু নমনীয়তা দেখাতে হয়।

এর আগে রোববার সেমিকন্ডাক্টর খাতে জাতীয় নিরাপত্তাভিত্তিক বাণিজ্য নিয়ে তদন্তের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমরা সেমিকন্ডাক্টর ও ইলেকট্রনিকস পণ্য সরবরাহ নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তায় শুল্ক তদন্ত শুরু করছি।

তবে রোববার ট্রাম্পের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, চীন থেকে আসা গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিপণ্য ও সেমিকন্ডাক্টরের ওপর আগামী দুই মাসের মধ্যেই নতুন শুল্ক বসানো হবে।

গত সপ্তাহে ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে দোদুল্যমান অবস্থানের কারণে ওয়াল স্ট্রিটে ২০২০ সালের কোভিড মহামারির পর সবচেয়ে বড় অস্থিরতা দেখা দেয়। ট্রাম্পের ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস ৫০০’ সূচক ১০ শতাংশের বেশি নিচে নেমে গেছে।

অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম এবিসির ‘দিস উইক’ নামক অনুষ্ঠানে লাটনিক বলেন, এক থেকে দুই মাসের মধ্যে ট্রাম্প স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে শুল্ক আরোপ করবেন। এর সঙ্গে সেমিকন্ডাক্টর ও ওষুধশিল্প খাতে শুল্ক আরোপ করা হবে। তাঁর মতে, এই শুল্কনীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে এসব পণ্যের উৎপাদন বাড়বে।

চীনও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বাড়িয়ে দেয়। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রোববার এক বিবৃতিতে জানায়, ‘বাঘের গলায় বাঁধা ঘণ্টা খুলতে হলে যিনি বেঁধেছেন, তাকেই খুলতে হবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানানো বিনিয়োগকারী বিল অ্যাকম্যান রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, চীনা পণ্যে যে ব্যাপক ও উচ্চ শুল্ক বসানো হয়েছে, তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হোক। তিনি বলেন, ট্রাম্প যদি ৯০ দিনের জন্য চীনের ওপর শুল্ক বন্ধ রাখেন এবং সাময়িকভাবে তা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনেন, তাতেই সরবরাহ শৃঙ্খল চীন থেকে সরে যেতে উৎসাহিত হবে। বিশৃঙ্খলা হবে না।

নর্থম্যান ট্রেডারের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান বাজার বিশ্লেষক স্বেন হেনরিচ রোববার এই শুল্কনীতির কড়া সমালোচনা করেন। সামাজিক মাধ্যমে এক্সে তিনি লেখেন, ‘যেদিন লাটনিক বরখাস্ত হবেন, সেদিনই বাজারে বছরের সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন হবে। প্রশাসন কী বলতে চায়, তা আগে ঠিক করুক—প্রতিদিনই সিদ্ধান্ত পাল্টাচ্ছে। মার্কিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এই অনিশ্চয়তার মধ্যে বিনিয়োগ করতে পারছে না।

এবিসির দিস উইক অনুষ্ঠানে ডেমোক্র্যাট সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ট্রাম্পের সর্বশেষ শুল্ক পরিবর্তনের সমালোচনা করে বলেন, অর্থনীতিবিদেরা বারবার বলছেন, এ ধরনের শুল্কনীতির কারণে প্রবৃদ্ধি ব্যাহত এবং মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে। তিনি আরও বলেন, এখানে শুল্কনীতি নেই; আছে কেবল বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতি।

মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন শুক্রবার রাতে আমদানিকারকদের জন্য এক নোটিশ প্রকাশ করে, যেখানে ২০টি পণ্যের ক্যাটাগরি শুল্ক থেকে অব্যাহতির তালিকায় রাখা হয়। এর মধ্যে ছিল কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ডিস্ক ড্রাইভ, সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস, মেমরি চিপ ও ফ্ল্যাট প্যানেল ডিসপ্লে।

এনবিসির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো বলেন, চীনের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব এখনো উন্মুক্ত। তবে চীনের সঙ্গে ফেন্টানিল আমদানি নিয়ে যা হয়েছে, তার তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। আলোচনার জন্য সাতটি দেশের তালিকায় চীনের নাম রাখেননি তিনি। ওই দেশগুলো হলো যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ইসরায়েল।

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার সিবিএসের ‘ফেস দ্য নেশন’ অনুষ্ঠানে বলেন, ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মধ্যে শুল্ক নিয়ে এখনো কথা বলার পরিকল্পনা নেই। তিনি অভিযোগ করেন, চীনই পাল্টা শুল্ক আরোপ করে বাণিজ্য উত্তেজনা তৈরি করছে। তাঁর আশা, চীনের বাইরে কয়েকটি দেশের সঙ্গে অর্থবহ চুক্তি শিগগিরই হতে পারে।

গ্রিয়ার আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো ৯০ দিনের মধ্যেই অর্থবহ চুক্তিতে পৌঁছানো। আমরা কয়েকটি দেশের সঙ্গে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অর্থবহ চুক্তি করব।