
এআই ছবিগুলো 'জীবনের অপমান' : হায়াও মিয়াজাকি
Progga News Desk:
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আপনি চেনা মানুষদের ‘কার্টুন ছবি’দেখতে পাচ্ছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ফুটবল খেলোয়াড় লিয়োনেল মেসি থেকে আপনার পাশের বাড়ির বাসিন্দাও ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে ফেলেছেন নিজের কার্টুন ছবি!
আপনি জানেন কি এটার নাম ‘জিবলি আর্ট’?
কমবেশি সবারই দেখে শুনে নতুন ‘ট্রেন্ড’এ গা ভাসাতে ইচ্ছে করছে । অনেকেই গুগলে সাঁর্চ করে খুঁজেও পেয়েছেন কিভাবে বানাবেন নিজের জিবলি অবতার বা কার্টুন ছবি। কিন্তু যা নিয়ে এত মাতামাতি, সেই ‘জিবলি’ আসলে কী ? কোথা থেকেই বা এলা জিবলি?
জিবলি কী?
জিবলি আসলে একটি জাপানি অ্যানিমেশন স্টুডিয়োর নাম। ১৯৮৫ সালে জাপানের টোকিয়োতে যার জন্ম হয় জিবলির।প্রথমে উজ্জ্বল জলরং অথবা অ্যাক্রেলিক রং দিয়ে হাতে আঁকা হত ওই স্টুডিয়োর সমস্ত অ্যানিমেশন। খামখেয়ালি কল্পনায় আঁকা সেই সমস্ত ছবি থেকে ফুটে উঠতো সম্পূর্ণ নতুন একটি রূপ। আর সেখান থেকেই জাপানের ওই অ্যানিমেশনের জনপ্রিয়তা জাপানের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছোয় অ্যানিমেশনের আন্তর্জাতিক দুনিয়ায়। ওয়াল্ট ডিজ়নি অংশীদারির প্রস্তাব দেয় জিবলি স্টুডিয়োকে।এরপর কার্টুন বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে জিবলি।
জিবলি নামের নানা রকম অর্থ এবং নানা দেশে এর ব্যবহারও রয়েছে। তবে জিবলি শব্দটি আরবি শব্দ যা ব্যবহার করা হয় সাহারা মরুভূমির উত্তপ্ত এবং শুষ্ক হাওয়াকে বোঝানোর জন্য। জিবলি স্টুডিয়োর তিন প্রতিষ্ঠাতার প্রধান জাপানি অ্যানিমেশন শিল্পী এবং চলচ্চিত্রকার হায়াও মিয়াজ়াকি অবশ্য ওই নাম বেছে নিয়েছিলেন ইটালির একটি বিমানের নাম থেকে।
ক্যাপ্রোনি কা.৩০৯ নামের ওই বিমান ছিল সাহারা মরুভূমিতে ইটালির নজরদারি চালানোর বিমান। সেই বিমানের নামও ছিল জিবলি (ইটালীয় উচ্চারণে গিবলি)। বিমান নিয়ে আগ্রহী মিয়াজ়াকি জেনেছিলেন সেই নাম এবং নামের মানে জেনে তার আরো ভাল লেগেছিল । নিজের স্টুডিয়ো তৈরি করার সময় তাই বেছে নিয়েছিলেন সেই নামই। জাপানি উচ্চারণে যা হয়েছিল জিবলি। মিয়াজ়াকি চেয়েছিলেন জিবলি তার নামের অর্থের মতোই অ্যানিমেশনের দুনিয়ার নতুনত্ব নিয়ে আসুক আর আলোড়ন সৃষ্টি করুক।
জিবলির জনপ্রিয়তা বোঝা যায় তার গত ৩৮ বছরে তৈরি হওয়া ২২টি ছবি থেকে। টেলিভিশনের জন্য বানানো হয়েছে ৩টি ছবি। প্রতিটি ছবিই অ্যানিমেশনের দুনিয়ায় তুমুল জনপ্রিয়। জাপানের ব্যবসা সফল যে দশটি ছবি রয়েছে এবং সর্বকালের সেরা ব্যবসা করেছে, তার মধ্যে চারটিই জিবলি স্টুডিয়োতে তৈরি। জিবলির ছবি অস্কার, গোল্ডেন বিয়ার, বাফতা, গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারও জিতেছে একাধিক বার। ২০২৪ সালের সেরা অ্যানিমেশন ছবির শিরোপা উঠেছে জিবলি স্টুডিয়োরই তৈরি ‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’ ছবির মাথায়। জিবলির তৈরি ছবি ‘স্পিরিটেড অ্যাওয়ে’ প্রথম ‘নন-ইংলিশ’ অ্যানিমেশন ছবি, যা মূল বিভাগে অস্কার জেতে। ২০২১ সালে জিবলির জনপ্রিয়তা দেখে টোকিয়োয় জিবলি মিউজ়িয়ামও তৈরি হয়। জিবলির দৌলতে মিয়াজ়াকি ২০২৪ সালে এশিয়ার ‘নোবেল প্রাইজ়’ রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কারও পান।
Miyazaki Hayao co-founded Studio Ghibli in 1985.(X)
জিবলির ট্রেন্ড
সম্প্রতি ওপেন এআই-এর চ্যাটজিপিটিতে ব্যবহারকারীরা দেখতে পান, তাঁরা তাঁদের ছবি জিবলি অ্যানিমেশনে বদলে নিতে পারছেন। বিষয়টি জানার পরেই চ্যাটজিপিটির নতুন সুবিধাটি নিয়ে হইচই পড়ে যায়। ওপেন এআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান জানিয়েছেন, চ্যাটজিপিটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে নানা রকম ভাবনাচিন্তা করছিলেন তাঁরা। সেই সময়েই জিবলি আর্টের কথা তাঁদের মাথায় আসে। ওই প্রযুক্তি প্রকাশ্যে আনার পরেই চাহিদা তুঙ্গে ওঠে চ্যাটজিপিটির। অল্টম্যানের কথায়, ‘‘জিবলি ছবির চাহিদা সামাল দিতে গিয়ে চ্যাটজিপিটির গ্রাফিক প্রসেসিং ইউনিটের বেহাল দশা। তবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে এটি করা হয়েছিল তা যে সফল হয়েছে, তাতে আমরা খুশি।
কিন্তু, সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় জিববলি আর্ট বানানোর যে ট্রেন্ড চলছে।এটাই সন্তুষ্ট নন জিবলির নির্মাতা হায়াও মিয়াজাকি। এটা নিয়ে ৯ বছর আগেই চিন্তা করেছিলেন তিনি। স্টুডিও জিবলির প্রতিষ্ঠাতা, অন্যতম সেরা এই আর্টিস্ট ও অ্যানিমেটর ২০১৬ সালে একটা এআই জেনারেটেড অ্যানিমেশন দেখে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। উনি আরো বলেছিলেন, "আপনারা যদি এমন বিদঘুটে জিনিস আরো বানাতে চান, তাহলে বানাতে পারেন। কিন্তু আমি আমার কাজে এই প্রযুক্তি কখনো, কোনোভাবে ব্যবহার করব না।
তখন এআই এত উন্নত ছিল না। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে নিজের আর্টের প্রায় হুবহু কপি এক নিমেষে তৈরি হয়ে যাওয়া দেখে মিয়াজাকি যে দুঃখটা পেলেন তা একমাত্র আর্টিস্টরাই অনুভব করতে পারবেন। স্টুডিও জিবলির সহ-প্রতিষ্ঠাতা হায়াও মিয়াজাকি এআই ছবিগুলিকে 'জীবনের অপমান' বলে অভিহিত করেছেন।