ট্রাম্পের ফেডারেল অনুদান স্থগিতের সিদ্ধান্তে আদালতের বাধা
- By Jamini Roy --
- 29 January, 2025
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শত শত বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অনুদান এবং ঋণ স্থগিতের পরিকল্পনা সাময়িকভাবে আটকে দিয়েছেন একজন মার্কিন বিচারক। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ কার্যকর থাকবে এবং তখন পুনরায় বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে। এই সিদ্ধান্ত হোয়াইট হাউসের বিতর্কিত নীতির ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে, কার্যকর হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই মার্কিন জেলা আদালতের বিচারক লরেন আলিখান এটি স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। বিচারক জানিয়েছেন, আগামী সোমবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে, এরপর এটি পুনর্বিবেচনা করা হবে।
এই মামলাটি দায়ের করেছিল অনুদানপ্রাপকদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংস্থা, যারা যুক্তি দেয় যে ট্রাম্পের নির্দেশের ফলে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হবে এবং লাখ লাখ নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আদালত এই যুক্তিকে বিবেচনায় নিয়ে সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করেন।
ট্রাম্প প্রশাসন তার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রবেশের পরপরই বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ফেডারেল অনুদান ও ঋণ স্থগিত রাখা। হোয়াইট হাউস বাজেট অফিস থেকে সমস্ত সংস্থাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল যে, যেকোনো নতুন অনুদান বা ঋণ প্রদান সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে।
প্রশাসনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, নতুন সরকার যেন তাদের নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে অর্থ বিতরণ করতে পারে, সেই উদ্দেশ্যেই এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্প, যেমন—
- দুর্যোগ ত্রাণ কর্মসূচি
- স্বাস্থ্যসেবা ও ক্যান্সার গবেষণা
- শিক্ষা ও কৃষি সহায়তা
- নিম্ন আয়ের নাগরিকদের জন্য সামাজিক সেবা
এ কারণে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বিচারক লরেন আলিখান তার আদেশে উল্লেখ করেছেন, ফেডারেল অনুদান ও ঋণ বিতরণ নিয়ে হঠাৎ পরিবর্তন জনগণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, "এই সিদ্ধান্তের ফলে হাজার হাজার ফেডারেল প্রকল্পে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যা অনেকের জীবিকা ও স্বাস্থ্যসেবার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।"
তিনি আরও জানান, স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে শুধুমাত্র বর্তমান অবস্থার স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য। সোমবার এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত শুনানি হবে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনসাধারণ ও বিরোধী দল কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যসেবা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।
ডেমোক্র্যাট নেতারা একে "জনগণের কল্যাণের বিরুদ্ধে একগুঁয়ে সিদ্ধান্ত" বলে অভিহিত করেছেন এবং বলছেন, এটি নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর ওপর সরাসরি আঘাত হানবে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পপন্থীরা দাবি করেছেন, "এটি শুধুমাত্র প্রশাসনের কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য নেওয়া সাময়িক সিদ্ধান্ত"।
সোমবার আদালতের পরবর্তী শুনানিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি বহাল থাকবে কি না। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আদালত দীর্ঘমেয়াদে এই নির্দেশ স্থগিত রাখতে পারে, কারণ এটি দেশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে হোয়াইট হাউস এখনো আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসন এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে।