যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণ নিষেধাজ্ঞায় আফগানিস্তানে মানবিক বিপর্যয়

যুক্তরাষ্ট্রের ৯০ দিনের বৈদেশিক ত্রাণ নিষেধাজ্ঞার ফলে মানবিক সংকটে পড়েছে আফগানিস্তান। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির ৪০ শতাংশ ত্রাণ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসত। তবে এই সহায়তা বন্ধ হওয়ায় আফগানিস্তানের লাখ লাখ মানুষ অনাহারের মুখে পড়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে, মার্কিন ত্রাণ ছাড়াও তাদের কাছে দেশের মাত্র অর্ধেক মানুষের জন্য খাদ্যের যোগান রয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক ত্রাণ কার্যক্রমকে "দেশের স্বার্থে উপকারী নয়" বলে উল্লেখ করে ৯০ দিনের জন্য সব বিদেশি সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা দেন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ভবিষ্যতে গুরুত্বের ভিত্তিতে সহায়তা পুনর্বিবেচনা করা হবে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধানের মতে, মার্কিন ত্রাণ দিয়েও আফগানিস্তানের ৬০ লাখ মানুষের জন্য একবেলার খাবারের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে, যা কেবল রুটি আর চা। নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটির অনেক পরিবার এখন এক বেলার খাবারের জন্যও সংগ্রাম করছে।

আফগানিস্তানের কান্ট্রি ডিরেক্টর সাই ওই লি বলেন, "সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনাহারে থাকা মানুষের সংখ্যা কিছুটা কমলেও, যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণ সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠবে।"

২০২১ সালে তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক সাহায্য এবং আর্থিক সংস্থার সহায়তা থেকে বঞ্চিত হতে শুরু করে। ব্যাংকিং খাতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, যা দেশের অর্থনীতিতে স্থবিরতা সৃষ্টি করে।

আফগানিস্তানে অনাহারে থাকা মানুষের সংখ্যা এক সময় ২ কোটি ৩০ লাখে পৌঁছেছিল। যদিও বর্তমানে এই সংখ্যা কমে ১.৫ কোটিতে নেমে এসেছে, তবুও এটি এখনো একটি বিরাট সংকট।

তালেবান সরকারের নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে অনেক দেশ আফগানিস্তানে ত্রাণ সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে দেশটির সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব আরও তীব্র হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন ত্রাণ সহায়তা বন্ধের এই সিদ্ধান্ত আফগানিস্তানের জন্য একটি বড় বিপর্যয়। দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা আগে থেকেই তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ হওয়া পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তুলেছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কাছে যে সামান্য খাদ্যের মজুদ রয়েছে, তা দিয়ে পুরো জনগণের খাদ্য চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়।