ডেনমার্ক বাড়াল প্রতিরক্ষা ব্যয়
- By Jamini Roy --
- 25 December, 2024
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এর আগে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম "ট্রুথ সোশ্যাল"-এ এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, "জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার জন্য গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি।"
ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের জবাবে ডেনমার্ক সরকার গতকাল মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ডেনমার্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী টোলস লোন পওসেন বলেছেন, নতুন প্যাকেজে প্রতিরক্ষা খাতে ১.৫ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় হাজার কোটি ক্রোনা ব্যয় করা হবে।
ডেনমার্কের প্রতিরক্ষা বাজেটে নতুন দুটি পরিদর্শন জাহাজ, দুটি দীর্ঘপাল্লার ড্রোন এবং কুকুর স্লেড দল গঠনের জন্য তহবিল অন্তর্ভুক্ত থাকবে। গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুক-এ আর্কটিক কমান্ডের কর্মী সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি তিনটি প্রধান বেসামরিক বিমানবন্দরের মধ্যে একটির উন্নয়ন করা হবে। এর ফলে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
পাওসেন বলেন, "আমরা দীর্ঘদিন ধরে আর্কটিক অঞ্চলে বিনিয়োগে ঘাটতি রেখেছি। এখন আমরা সেখানে একটি শক্তিশালী উপস্থিতি গড়ে তুলতে চাই।"
ট্রাম্পের এই আগ্রহ নতুন নয়। ২০১৯ সালেও গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি, যা ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ডের নেতাদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়ে। ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডেরিকসেন সেই প্রস্তাবকে "অবাস্তব" বলে উল্লেখ করেন।
সেই সময় গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুটে এগেডে বলেছিলেন, "গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়।" তবে তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক উন্নত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ট্রাম্প তখন ডেনমার্কে তার নির্ধারিত রাষ্ট্রীয় সফরও বাতিল করতে বাধ্য হন।
ট্রাম্পই প্রথম মার্কিন নেতা নন যিনি গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দিয়েছেন। ১৮৬০-এর দশকে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন এবং পরবর্তীকালে ১৯৪৬ সালে প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস. ট্রুম্যানও এই দ্বীপ কিনতে চেয়েছিলেন। তবে ডেনমার্ক কখনো এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, যার ভৌগোলিক ও কৌশলগত গুরুত্ব অনেক। এটি উত্তর আমেরিকা থেকে ইউরোপে যাওয়ার সবচেয়ে সংক্ষিপ্ততম জলপথে অবস্থিত। দ্বীপটিতে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ প্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। পাশাপাশি এখানে রয়েছে মূল্যবান খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার।
গ্রিনল্যান্ড শুধু বৃহৎ ভৌগোলিক এলাকা বা খনিজ সম্পদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়; এটি আর্কটিক অঞ্চলের জলবায়ু ও সামরিক কৌশলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বীপটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা সহজেই ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখতে পারে।
ট্রাম্পের বক্তব্য গ্রিনল্যান্ডকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ডেনমার্কের মধ্যে সম্পর্ক নতুন মোড় নিতে পারে। তবে ডেনমার্কের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা এবং গ্রিনল্যান্ডের নেতাদের প্রতিক্রিয়া এই আলোচনা কতদূর এগোয় তা দেখার বিষয়।