Logo

অর্থনীতি    >>   এলসি অনুমোদনের ঘাটতিতে দর্শনা রেলস্টেশনে পণ্য আমদানি কমেছে

এলসি অনুমোদনের ঘাটতিতে দর্শনা রেলস্টেশনে পণ্য আমদানি কমেছে

এলসি অনুমোদনের ঘাটতিতে দর্শনা রেলস্টেশনে পণ্য আমদানি কমেছে

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনের মাধ্যমে ভারত থেকে পণ্য আমদানি ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এর ফলে স্টেশনটির শ্রমিক ও ট্রাক চালকদের কর্মসংস্থান সংকটে পড়েছে। এই পণ্য আমদানি কমে যাওয়ার মূল কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করেছেন, ব্যাংক চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) অনুমোদন না দেওয়ার ফলে তারা নির্দিষ্ট পরিমাণে পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। স্থানীয় শ্রমিক ও পরিবহন খাতের কর্মীদের মতে, তাদের কাছে এখন পর্যাপ্ত কাজ নেই, এবং সংসারের খরচ চালাতে গিয়ে তারা ব্যাপক অর্থনৈতিক চাপে পড়ছেন।

দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলপথ দিয়ে ভারত থেকে মালবাহী ওয়াগনে করে চাল, ডাল, গমসহ বিভিন্ন পণ্য দ্রুত আমদানি করা হয়। এর পরপরই এসব পণ্য নির্দিষ্ট গন্তব্যে পাঠানো হয় এবং স্থানীয় ব্যবসায়িক চাহিদা পূরণে ব্যবহার করা হয়। তবে ব্যাংকগুলো থেকে চাহিদা মতো এলসি অনুমোদন না পাওয়ায় আমদানি কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে, যা বন্দর ও সংশ্লিষ্ট রেল ইয়ার্ডে কাজের অভাবে কর্মচাঞ্চল্য কমিয়ে দিয়েছে।

প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমদানি কমে যাওয়ায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনে আমদানি হওয়া পণ্যের পরিমাণও অনেক কমে গেছে। কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই রেলস্টেশনের মাধ্যমে ২ হাজার ৭৯৮টি ওয়াগনে ১২ লাখ ৩২ হাজার ৬১৬ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়, যা থেকে রাজস্ব আয় হয় ৫৯ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই সংখ্যাটি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে ৯ হাজার ৭৪৯টি ওয়াগনে মাত্র ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৫৫৯ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। এর ফলে রাজস্ব আয়ও নেমে আসে ২৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকায়।

চলতি অর্থবছর ২০২৪-২৫-এর প্রথম চার মাসে আমদানির পরিমাণ আরও কমে গেছে। কাস্টমস তথ্যমতে, প্রথম চার মাসে ১ হাজার ৫৫৪টি ওয়াগনে মাত্র ৯১ হাজার ৯৭৭ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে, এবং এ থেকে আয় হয়েছে মাত্র ৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম চার মাসে এই কমতি আমদানি রেলস্টেশনে রাজস্ব আয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে।

শ্রমিকদের মতে, স্টেশনে কাজের পরিমাণ কমে যাওয়ায় তারা প্রায় বেকার অবস্থায় রয়েছেন। কর্মহীন এই সময়গুলোতে তাদের পরিবার পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কাজের সুযোগ আরও সংকুচিত হলে তাদের অনেকে চরম আর্থিক সংকটে পড়বেন। শ্রমিকরা জানান, এমন অবস্থায় তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, ব্যাংকগুলো দ্রুত এলসি অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করবে, যাতে পণ্য আমদানি পুনরায় শুরু হতে পারে এবং স্টেশনের শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থান স্থিতিশীল হয়।

এই অবস্থায় ব্যাংকিং খাতের সঠিক সিদ্ধান্ত এবং এলসি অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজকরণ দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং স্থানীয় অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক করতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।