গাজার ২,৫০০ শিশুকে চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
- By Jamini Roy --
- 31 January, 2025
গাজায় যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞে আটকে পড়া শিশুদের জীবন বাঁচাতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “গাজার ২,৫০০ শিশুকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। না হলে তাদের জীবন সংকটাপন্ন হবে।”
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রয়টার্স-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকের পর গুতেরেস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই আহ্বান জানান। মার্কিন চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বহু শিশু মারা যেতে পারে।
ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের ১৫ মাস পার হতে চলেছে। এই দীর্ঘ সংঘাতে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। চারজন মার্কিন চিকিৎসক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে গাজায় কাজ করেছেন এবং তারা জানিয়েছেন, অসংখ্য শিশু মারাত্মক আহত অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় ধুঁকছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ট্রমা সার্জন ফিরোজ সিধওয়া, যিনি গত বছর ২৫ মার্চ থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত গাজায় স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন, বলেন, “আমাদের সামনে এমন শিশুরা রয়েছে, যারা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আমরা জানি না, তারা আগামীকাল বেঁচে থাকবে কি না।”
তিনি আরও বলেন, “কেউ আজ মারা যাচ্ছে, কেউ আগামীকাল মারা যাবে, কেউ হয়তো পরের দিন। আমাদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।”
গাজার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। তাদের অধিকাংশই যুদ্ধের কারণে গুরুতর আহত। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পাওয়ায় অনেক শিশুর অঙ্গচ্ছেদ করতে হচ্ছে।
সিধওয়া একটি তিন বছরের শিশুর কথা উল্লেখ করে বলেন, “বাচ্চাটির হাতের পোড়া অংশ সেরে গেলেও ক্ষতস্থানের টিস্যু ধীরে ধীরে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দিচ্ছিল। এতে তার হাত কেটে ফেলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।”
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আয়েশা খানও গাজার পরিস্থিতি নিয়ে ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “অনেক শিশুর অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে, কিন্তু তাদের জন্য কোনো কৃত্রিম অঙ্গ বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেই।”
জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস কেবল শিশুদের চিকিৎসার ওপর জোর দেননি, বরং তিনি নিশ্চিত করতে চান যে, চিকিৎসা শেষে তারা আবার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবে।
তিনি বলেন, “এই শিশুরা কেবল চিকিৎসার জন্য সরানো হবে না, বরং তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তাও থাকতে হবে।”
গাজায় বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ মানুষের মানবিক সংকট চলছে। যুদ্ধের ফলে হাসপাতালগুলো কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘের আহ্বানের পরও যদি জরুরি পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এই শিশুদের বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে। গাজার সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি এখন একটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে।