Logo

আন্তর্জাতিক    >>   নিষেধাজ্ঞার পরও রাশিয়ার গ্যাস আমদানির চিন্তায় ইউরোপ, মতভেদ ইইউতে

নিষেধাজ্ঞার পরও রাশিয়ার গ্যাস আমদানির চিন্তায় ইউরোপ, মতভেদ ইইউতে

নিষেধাজ্ঞার পরও রাশিয়ার গ্যাস আমদানির চিন্তায় ইউরোপ, মতভেদ ইইউতে

ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়ার ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরেও আবারও রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য চুক্তির অংশ হিসেবে ইইউভুক্ত কিছু দেশ গ্যাস সরবরাহ পুনরায় চালুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।

২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ইইউভুক্ত দেশগুলো মস্কোর জ্বালানি সরবরাহের ওপর নির্ভরতা কমাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি নিষিদ্ধ করা হয় এবং সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে ইউরোপীয় দেশগুলো বিকল্প উৎসের সন্ধানে যুক্তরাষ্ট্র ও নরওয়ে থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) আমদানি বাড়ায়, যা অনেক বেশি ব্যয়বহুল।

এই উচ্চমূল্যের গ্যাস আমদানির ফলে ইইউভুক্ত দেশগুলোর জ্বালানি ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যায় এবং শিল্প খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে জার্মানি, হাঙ্গেরি এবং কিছু পশ্চিম ইউরোপীয় দেশ ক্রমাগত অর্থনৈতিক চাপে পড়ে, যা তাদের রাশিয়া থেকে পুনরায় গ্যাস আমদানি চালুর বিষয়ে ভাবতে বাধ্য করছে।

সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জার্মানি ও হাঙ্গেরির মতো দেশগুলো রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ পুনরায় চালুর পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। বিশেষ করে জার্মান অর্থনীতি উচ্চমূল্যের জ্বালানি আমদানি এবং শিল্প উৎপাদনে ব্যয়বৃদ্ধির কারণে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

অন্যদিকে, পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু দেশ যেমন পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া এবং লাটভিয়া রাশিয়ার গ্যাস পুনরায় আমদানির এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করছে। তাদের মতে, এটি মস্কোকে আবারও শক্তিশালী করে তুলবে এবং ইইউকে রাশিয়ার ওপর জ্বালানি নির্ভরশীল করে ফেলবে।

ইইউর কিছু সদস্য রাষ্ট্র মনে করছে, রাশিয়া থেকে গ্যাস পুনরায় আমদানির সিদ্ধান্ত ইউক্রেন যুদ্ধে কিয়েভের অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে, কারণ এটি রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা করবে এবং মস্কোর ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা হ্রাস করবে।

যুদ্ধ শুরুর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট গ্যাসের প্রায় ৪০ শতাংশ সরবরাহ করত রাশিয়া। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার ফলে ইইউকে বিকল্প উৎসের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে, যা ব্যয়বহুল ও জটিল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ এবং ইউরোপের জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে ইইউর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। একদিকে রাশিয়ার গ্যাস আমদানি চালুর মাধ্যমে জ্বালানির দাম কমানো সম্ভব, যা ইউরোপীয় অর্থনীতির জন্য ভালো হতে পারে। কিন্তু অন্যদিকে, এটি রাশিয়ার ওপর ইইউর নির্ভরতা বাড়িয়ে দেবে এবং মস্কোকে নতুন করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা দেবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই দ্বন্দ্বের কারণে ইউরোপ কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, যেখানে জ্বালানি নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ভূরাজনৈতিক কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

রাশিয়ার গ্যাস পুনরায় আমদানির সম্ভাবনা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে গভীর বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে। জার্মানি ও হাঙ্গেরির মতো দেশগুলো যেখানে অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় এই পরিকল্পনার পক্ষে, সেখানে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর ঝুঁকির কারণে বিরোধিতা করছে।

ফলস্বরূপ, ইইউর ভবিষ্যৎ জ্বালানি নীতিতে পরিবর্তন আসতে পারে, যা শুধু ইউরোপ নয়, বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।





বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

P.S 220 Winter concert

P.S 220 Winter concert