ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের পুনর্গঠনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন কমিটি
- By Jamini Roy --
- 31 January, 2025
বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা ও আর্থিক ব্যবস্থার পুনর্গঠনের লক্ষ্যে একটি বিশেষ নীতি সহায়তা প্রদান কমিটি গঠন করেছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বিবিধ নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তাদের পুনরুদ্ধার এবং টেকসই অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এই কমিটি সুপারিশ করবে। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের যোগাযোগ ও প্রকাশনা বিভাগ (ডিসিপি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করে।
বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক কারণ যেমন—কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন করে একটি পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃত অবস্থা যাচাই করবে এবং কীভাবে তাদের পুনরুদ্ধার করা যায়, সে বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করবে।
কমিটির মূল লক্ষ্য হলো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাগুলোর কার্যক্রম পুনরায় সচল করে তাদের লাভজনক অবস্থায় নিয়ে আসা, যাতে তারা তাদের ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। যেসব ঋণগ্রহীতা নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে প্রকৃত ক্ষতির শিকার হয়েছে, তাদের যথাযথ যাচাই-বাছাই করেই নীতি সহায়তার আওতায় আনার সুপারিশ করবে কমিটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আর শিখা জানান, পাঁচ সদস্যের এই কমিটিতে রয়েছেন—
১. বাংলাদেশ ব্যাংকের অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) মেজবাহ-উল-হক।
২. অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. দেলোয়ার হোসেন।
৩. অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞ মামুন রশীদ।
৪. বাণিজ্য খাতের প্রতিনিধি হিসেবে হক বে থেকে আবদুল হক।
৫. আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তা সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান।
এই কমিটি ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি মূল্যের যেসব ঋণ নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে শ্রেণিকৃত হয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করবে এবং পুনর্গঠনের সম্ভাবনা মূল্যায়ন করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কমিটির কাজ শেষ করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। তবে তারা প্রতি মাসে সর্বোচ্চ দুবার বৈঠক করতে পারবে এবং এই বৈঠকের জন্য সদস্যদের পারিতোষিক প্রদান করা হবে।
কমিটি তাদের সুপারিশগুলোর ভিত্তিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যাংক খাতকে সুসংহত করা, ঋণখেলাপির সংখ্যা কমানো এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এ ধরনের নীতি সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা দিলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে এ ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও কার্যকর মনিটরিং নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।