ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ দাবানল ৯ দিন ধরে চলছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৫ জন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। দাবানল ৭ জানুয়ারি শুরু হয়ে দ্রুত বিস্তৃত হয়ে পুরো দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যাসেফিক প্যালিসেডস এবং আলটাডেনার মতো অভিজাত এলাকাগুলো দাবানলের প্রধান ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল।
দাবানল প্যাসেফিক প্যালিসেডস এলাকাকে বিশেষভাবে ধ্বংস করেছে। এখানে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বাড়িঘর এবং স্থাপনা পুড়ে গেছে। অভিজাত এই এলাকায় এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
প্যালিসেডস থেকে ৪০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত আলটাডেনা এলাকায় ‘ইটন ফায়ার’ নামে আরেকটি দাবানলে ধ্বংস হয়েছে আরও পাঁচ হাজারের বেশি স্থাপনা। এই এলাকায়ও আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
স্থানীয় সময় বুধবার (১৫ জানুয়ারি) থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসে শুরু হওয়া ‘সান্তা অ্যানা’ ঝোড়ো বাতাস আগুন নিয়ন্ত্রণে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। এই বাতাসের কারণে দাবানল আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শুষ্ক এবং দ্রুতগতির এই বাতাস দাবানল নিয়ন্ত্রণকে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দফতরের মতে, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বর্তমান আবহাওয়া চরমভাবে প্রতিকূল। গত আট মাসে কোনো বৃষ্টি না হওয়ায় মাটি ও পরিবেশ একেবারে শুষ্ক হয়ে পড়েছে। এর ফলে ‘আগুন টর্নেডো’ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন পরিস্থিতিতে নতুন দাবানল সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বাতাসের মান ইতিমধ্যেই বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দফতর ‘রেড ফ্ল্যাগ’ সতর্কতা জারি করেছে। এর অর্থ, পুরো অঞ্চল আরও অন্তত এক সপ্তাহ তীব্র বাতাসের মুখে পড়বে। ফলে আগুনের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
দাবানলের ধ্বংসযজ্ঞ শুধু প্রাণহানি এবং সম্পদের ক্ষতিতেই সীমাবদ্ধ নয়। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বাতাস এখন মারাত্মকভাবে দূষিত, যা জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল শুধু এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং এটি মানুষের জীবন, সম্পদ এবং পরিবেশের ওপর একটি চরম আঘাত। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামি দিনগুলোতে দাবানল আরও বিস্তৃত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের দ্রুত সুরক্ষিত স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।