কাজী নজরুল ইসলাম জাতীয় কবি হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আতাউর রহমানের সই করা গেজেট প্রজ্ঞাপনে এ ঘোষণা উল্লেখ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) প্রকাশিত এই গেজেটে জানানো হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী তাকে জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, কবি নজরুলের জাতীয় কবির মর্যাদা ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটি দেশের জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল। ১৯৭২ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত থেকে ঢাকায় আনা হয় এবং তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। এরপর থেকে জাতীয় কবি হিসেবে তার স্বীকৃতি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা চলছিল। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবার তা আনুষ্ঠানিক গেজেট আকারে প্রকাশ করা হলো।

কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭২ সালের ২৪ মে কলকাতা থেকে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে সপরিবারে ঢাকায় আসেন। তার বসবাসের জন্য ধানমন্ডির একটি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে সরকার তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে।

একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি কবি নজরুল একুশে পদকে ভূষিত হন, যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান। এর আগে ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধি প্রদান করে। অসুস্থতার কারণে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।

পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদউল্লাহ একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে কাজী নজরুল ইসলামকে ডি.লিট উপাধি প্রদান করেন।

কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে তার একটি গানে তিনি লিখেছিলেন, "মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই, যেন গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।" তার এই ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে সমাহিত করা হয়।

কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও কর্ম বাঙালি জাতির জন্য অমূল্য সম্পদ। তার সাহিত্য ও সংগীতের মাধ্যমে তিনি মানবতার গান গেয়েছেন, বিদ্রোহের চেতনা ছড়িয়েছেন। জাতীয় কবি হিসেবে তার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।