গাজার স্বাস্থ্য খাত পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন: ডব্লিউএইচও
- By Jamini Roy --
- 17 January, 2025
গাজার বিধ্বস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরে অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাথমিক মূল্যায়নে এই তথ্য উঠে এসেছে। গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ধ্বংসযজ্ঞ তুলে ধরে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন বলেন, “এত বড় ধ্বংস আমি জীবনে অন্য কোথাও দেখিনি। শুধুমাত্র স্বাস্থ্য খাত পুনর্নির্মাণে প্রথম দেড় বছরে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি প্রয়োজন এবং দীর্ঘমেয়াদে এই খরচ দাঁড়াবে ১০ বিলিয়ন ডলার।”
ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস জানিয়েছেন, গাজার অর্ধেকেরও কম হাসপাতাল বর্তমানে কার্যকর রয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং জরুরি সেবাগুলো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধের ঘাটতিসহ চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
পিপারকর্ন উল্লেখ করেন, গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুনর্গঠন শুধু আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল নয়; বরং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, “এই ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা এমন যে, এটি কেবল স্থানীয় প্রচেষ্টায় সমাধান করা সম্ভব নয়।”
গাজায় দীর্ঘ ১৫ মাসের সংঘর্ষের পর ইসরাইল এবং হামাস মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় অবশেষে একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে। বুধবার এ চুক্তি ঘোষণা করা হয়, যা রোববার থেকে কার্যকর হবে। ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস এই চুক্তিকে ‘সেরা খবর’ বলে অভিহিত করেছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে এটি ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যকার সম্পর্কের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটাবে।
তবে চুক্তিটি দেরিতে কার্যকর হওয়ায় হতাশাও প্রকাশ করেছেন টেড্রোস। তিনি বলেন, “যুদ্ধে যে বিপুল প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে, তার ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু এই চুক্তি নতুন করে শান্তির পথে যাত্রা শুরু করবে।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের আকস্মিক হামলার পর ইসরাইল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। টানা ১৫ মাস ধরে চলা এই সংঘর্ষে ৪৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে ইসরাইলের আক্রমণ শুধু প্রাণহানি ঘটায়নি; গাজার অর্থনীতি, অবকাঠামো এবং স্বাস্থ্য খাতও প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজার পুনর্গঠনে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে ডব্লিউএইচও। সংস্থাটির মতে, সংঘাত-পরবর্তী পুনর্গঠনে দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্প অপরিহার্য।
বিশ্লেষকদের মতে, গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনের এই বিশাল পরিকল্পনা কেবল আর্থিক সহায়তায় সীমাবদ্ধ থাকলে সফল হবে না। প্রয়োজন কার্যকর কূটনৈতিক সমাধান, আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং শান্তি বজায় রাখার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ।