Logo

আন্তর্জাতিক    >>   পরিকল্পনা ‘চূড়ান্ত’, যেকোনো সময় ইসরাইলে হামলা : ইরান

পরিকল্পনা ‘চূড়ান্ত’, যেকোনো সময় ইসরাইলে হামলা : ইরান

পরিকল্পনা ‘চূড়ান্ত’, যেকোনো সময় ইসরাইলে হামলা : ইরান

ইরান-ইসরায়েল সম্পর্কের উত্তেজনা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। গত সপ্তাহে ইসরায়েলের অতর্কিত বিমান হামলার প্রতিশোধ নিতে পাল্টা আক্রমণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে ইরান। ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)-এর সাবেক কমান্ডার ও বর্তমান আইনপ্রণেতা ইসমাইল কাউসারি নিশ্চিত করেছেন যে, ইসরায়েলে আঘাত হানার বিশদ পরিকল্পনা প্রস্তুত এবং এখন হামলার সময় ও কৌশল নির্ধারণের বিষয়টি সামরিক নেতাদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে।

কাউসারি আরও জানান, ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সদস্যরা সবাই এ বিষয়ে একমত যে ইসরায়েলের প্রতি প্রতিশোধ নেয়া প্রয়োজন। তার ভাষায়, "ইসরাইলের সাম্প্রতিক আক্রমণের জবাব দেয়া আমাদের অধিকার, এবং আমরা অবশ্যই এই অধিকার প্রয়োগ করব।" এই মন্তব্যে ইসরায়েল এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ আরও বাড়ছে।

গাজা ও লেবানন সংকটের মধ্যেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা বেড়ে গেছে। গত এপ্রিল মাসে ইরান প্রথমবারের মতো ইসরাইলে বড় ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এরপর অক্টোবরের ২৬ তারিখে ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালায়, যেখানে তারা তেহরানসহ কয়েকটি প্রদেশের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এতে শতাধিক যুদ্ধবিমান ব্যবহৃত হয়। ইসরায়েল হামলার পর ইরানকে পাল্টা আক্রমণ থেকে বিরত থাকতে হুঁশিয়ারি দেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যও ইরানকে একই পরামর্শ দেয়। তবে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরায়েল আক্রমণের জন্য সামরিক প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন।

টাইমস অব ইসরায়েল-এর প্রতিবেদন অনুসারে, ইরান ৫ নভেম্বর মার্কিন নির্বাচনের আগে ইসরায়েলে হামলা করবে না। তবে অন্য কিছু সূত্র বলছে, ইরান নির্বাচনের আগেই হামলা চালাতে পারে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান এবার আরও শক্তিশালী ওয়ারহেড ও অন্যান্য আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করবে, যা আগে কোনো হামলায় ব্যবহৃত হয়নি। মিশরের একজন কর্মকর্তা জার্নালকে জানান, তেহরান কায়রোকে সতর্ক করেছে যে, এবারের আক্রমণ অনেক বেশি জটিল ও আক্রমণাত্মক হবে।

ইরানের সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে বি-৫২ বোমারু বিমান পাঠিয়েছে। মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) নিশ্চিত করেছে যে, এসব বোমারু বিমান ইরানের যে কোনো প্রতিশোধমূলক আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। মার্কিন কর্মকর্তারা ইরানকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তারা যদি ইসরায়েলে হামলা চালায় তবে যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলকে থামানোর চেষ্টা করবে না। এই বার্তাটি তেহরানকে সরাসরি জানানো হয়েছে বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি পূর্বে এক বক্তব্যে বলেন, “শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানানো ইরানের আইনগত অধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইন ও শরীয়া এই প্রতিক্রিয়াকে সমর্থন করে।” যদিও তিনি আক্রমণের সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেননি, তবে তার বক্তব্যে স্পষ্ট যে, ইরান এই প্রতিশোধ থেকে পিছু হটবে না।

গত ১ অক্টোবরের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মতো, এবারও ইরান ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করবে বলে ইরানি সামরিক সূত্র জানিয়েছে। ইরাকি ভূখণ্ড থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পরিকল্পনাও রয়েছে। ইরানের সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের চার সৈন্য এবং একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ায় প্রতিশোধ নিতে বাধ্য হচ্ছে ইরান।

মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই পাল্টা আক্রমণের প্রতিশ্রুতি গোটা অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।